‘হাঁস-মুরগি প্রকল্পের সুখবর!’—ভুয়া ফার্মের নামে জকিগঞ্জে প্রতারণা

গ্রামের নারী উদ্যোক্তাদের টার্গেট করে সক্রিয় প্রতারক চক্র, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি


নিজস্ব প্রতিবেদক

“গ্রাহক ভাই ও কৃষক ভাইদের জন্য সুখবর”—এমন আকর্ষণীয় শিরোনামে ছাপানো একটি রঙিন লিফলেট হাতে নিয়ে জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরছে একদল প্রতারক।

তারা দাবি করছে, ‘লেয়ার মুরগী ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারী’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকার বিনা মূল্যে হাঁস-মুরগি, খাঁচা ও খাদ্য বিতরণ করছে। আর এই প্রকল্পে অংশ নিতে জনপ্রতি মাত্র ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা দিতে হবে—এমন প্রলোভনেই প্রতারিত হচ্ছেন অনেক সাধারণ মানুষ।

প্রতারকরা গ্রামের নারী উদ্যোক্তা, কৃষক ও গৃহিণীদের প্রধান টার্গেট বানিয়েছে। “নিবন্ধন ফি” বা “খাদ্য পরিবহন খরচ” হিসেবে টাকা নেওয়ার পর তারা হাওয়া হয়ে যাচ্ছে—ফোন বন্ধ, অফিস অজানা, এবং কোনো যোগাযোগও নেই।

এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন কাজলসার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মহিলা মেম্বার আছিয়া বেগম ও একই গ্রামের গৃহিণী রুবিনা বেগম

তারা বলেন, “দু’জন লোক এসে বলল সরকার থেকে হাঁস-মুরগি দেবে, শুধু নাম নিবন্ধনের খরচ দিতে হবে। আমরা টাকা দিয়েছি, কিন্তু এখন তাদের আর খুঁজে পাচ্ছি না।”

এই দুই নারীই আশা করেছিলেন সরকারি প্রকল্পের সহায়তায় ছোট আকারে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করবেন। কিন্তু টাকা দেওয়ার পর বুঝতে পারেন, পুরো বিষয়টি প্রতারণা।

প্রতারকরা যে কার্ডটি ব্যবহার করছে, সেখানে লেখা আছে— “লেয়ার মুরগী ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারী, গাজীপুর সদর, ঢাকা”

এতে কয়েকটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে এবং “প্রধান নির্বাহী” হিসেবে উল্লেখ আছে একজন ফাতেমাতুন জান্নাত নামের ব্যক্তি। লিফলেটে এমনভাবে সরকারি প্রকল্পের ছোঁয়া দেওয়া হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই বিশ্বাস করে বসে।

জকিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, এ নামে কোনো সরকারি বা অনুমোদিত প্রকল্প নেই

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এখনো কোনো হাঁস-মুরগি বিতরণ প্রকল্প হাতে নিইনি। কেউ যদি টাকা নেয়, তারা প্রতারণা করছে—জনগণ যেন সতর্ক থাকে।”

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এই প্রতারক চক্রের মূল হোতাদের দ্রুত শনাক্ত না করলে আরও বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এ প্রসঙ্গে এনজিও সংস্থা এসডিএসের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল হামিদ বলেন— অপরিচিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া কার্ড, লিফলেট বা প্রস্তাবের প্রলোভনে কেউ যেন কোনো টাকা প্রদান না করেন।

যে কোনো সরকারি প্রকল্পে অংশ নেওয়ার আগে উপজেলা প্রশাসন বা প্রাণিসম্পদ অফিসের অনুমোদন যাচাই করা জরুরি।

সবুজ প্রান্তের পাঠকদের জন্য পরামর্শ
🔹 অপরিচিত প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনো অর্থ হস্তান্তর করবেন না।
🔹 কোনো প্রকল্পের বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে টাকা দিলে প্রতারণার শিকার হতে পারেন।
🔹 প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সবুজ প্রান্ত

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে প্রতারণা নতুন নয়। তবে এই ঘটনাটি প্রশাসনের জন্য সতর্কবার্তা।

সরকারের নাম ব্যবহার করে প্রতারণা রোধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এমন ভুয়া প্রকল্প ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন