সচিব মারা যাওয়ার পর স্থবির জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম

জন্ম ও মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে প্রকাশিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৭ দিনের মধ্যে এক বছরের কম বয়সী সব শিশুর জন্ম নিবন্ধন এবং সম্প্রতি মৃত্যুবরণকারীদের মৃত্যু নিবন্ধন সম্পন্নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন না করলে পরবর্তীতে শিশুর এক বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর আর জন্ম নিবন্ধন বা মৃত্যু নিবন্ধন করা যাবে না। এমনকি জন্ম সনদ ছাড়া টিকা, বিদ্যালয়ে ভর্তি ও পাসপোর্ট তৈরি করা সম্ভব হবে না বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
কিন্তু সরকারি এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার মধ্যেই জকিগঞ্জ উপজেলার ৬নং সুলতানপুর ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের ইউজার আইডি নিষ্ক্রিয় থাকায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সংশোধন ও নবায়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে শিশুর জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যুর সনদ নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সরেজমিনে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আগত বহু নারী-পুরুষ হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বারবার ইউনিয়ন পরিষদে এসে শুধুই শুনছেন “সচিব নেই”, “ইউজার আইডি বন্ধ”—এই দুই কথার উত্তর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন সচিব ফখরুল ইসলামের মৃত্যুর পর থেকেই জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে সদর ইউনিয়নের সচিব আসাদ আহমদকে সপ্তাহে দুই দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হলেও ইউজার আইডি নিষ্ক্রিয় থাকায় তিনি কোনো আবেদন অনুমোদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সবুজ প্রান্তকে বলেন, “আমাদের সচিব মারা যাওয়ার পর সদর ইউনিয়নের সচিবকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইউজার আইডি একটিভ না থাকায় তিনি কাজ শুরু করতে পারছেন না। কেন ইউজার আইডি এখনো চালু হচ্ছে না, আমরা নিজেরাও জানি না।”
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য দাবি করেন, সাবেক সচিব মৃত্যুর আগে জন্ম নিবন্ধন বাবদ আদায়কৃত সরকারি রাজস্বের কিছু অর্থ জমা দেননি। এ কারণেই প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিয়েছে এবং ইউজার আইডি পুনরায় চালু করা যায়নি।
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান সবুজ প্রান্তকে জানান, “নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবকে ইউজার আইডি সক্রিয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বকেয়া টাকার বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত নই।”
এদিকে জনসাধারণের দাবি—“অবিলম্বে ইউজার আইডি চালু করে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হোক, যাতে শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের মতো মৌলিক সেবার জন্য মানুষকে আর হয়রানির শিকার হতে না হয়।”
সচেতন মহল মনে করছে, জেলা প্রশাসনের সদ্য জারিকৃত কঠোর নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুলতানপুর ইউনিয়নে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এখানকার শত শত পরিবার প্রশাসনিক জটিলতায় পড়বে।