মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর—এখন জেলার নতুন ‘লতির গ্রাম’। আগে বিচ্ছিন্নভাবে অল্প–স্বল্প জমিতে লতি–কচুর চাষ হলেও গত কয়েক বছরে চাষাবাদে এসেছে আমূল পরিবর্তন। স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ আর বাজারে বাড়তি চাহিদা মিলিয়ে গ্রামটিতে এখন লতি চাষ বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে।
ভরা মৌসুমে গিয়াসনগরে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে লতির আবাদ হয়। সারা বছরেও ৫০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে লতি চাষ চলছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন এখান থেকে ট্রাকভর্তি লতি যায় সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন শহরে।
অর্গানিক লতি চাষে নতুন কৃষকের পদচারণা
গ্রামের হাবিবুর রহমান এ বছর প্রথমবারের মতো ২১ শতাংশ জমিতে ‘লতিরাজ বারি কচু–১’ রোপণ করেছেন। সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করছেন তিনি।
হাবিবুর জানান, ভাদ্র মাসে চারা লাগানোর পর প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে লতি তুলছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি ৪০–৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহে ৭০–৭৫ কেজি লতি উঠছে। ভবিষ্যতে উৎপাদন বাড়িয়ে সপ্তাহে ৩০০–৪০০ কেজি তোলার আশা তার।
তার বিনিয়োগ প্রায় ৩০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়েই দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ হবে বলে মনে করছেন তিনি। পাশাপাশি লতি–কচুর চারা বিক্রিও বাড়তি আয়ের পথ খুলে দেবে।
চাষ বাড়ছে—যোগ দিচ্ছেন আরও কৃষক
এ বছর আবদুল আজিজ ১ কিয়ার (৩০ শতাংশ) জমিতে লতির আবাদ করেছেন। আমন কাটার পর আরও ১৫ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ করবেন।
মিলন মিয়ার ৪ কিয়ার, কাজিম মিয়ার আড়াই কিয়ার, আফাই মিয়ার ৪ কিয়ার জমিতে লতি চাষ রয়েছে। এভাবে গ্রামে নতুন চাষির সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত।
মৌসুমে প্রতিদিন ট্রাকে যায় লতি
লতি–কচুর অভিজ্ঞ চাষি আমির হোসেন জানান—
“ভরা মৌসুমে নিচে প্রায় ১৫০ কিয়ার জমিতে লতির চাষ হয়। প্রতিদিন এক–দুই ট্রাক লতি সিলেট যায়। গ্রামের চাষি বাড়তেছে… এবার আরও নতুন খেত হইব।”
তিনি জানান, এক কিয়ার জমিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট খরচ ৮০–৮৫ হাজার টাকা। রোগবালাই না থাকলে এক কিয়ার থেকেই দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা আয় সম্ভব। তিনি টানা আট–দশ বছর ধরে লতি চাষ করছেন।
চারা রোপণ থেকে ফলন—সারা বছরেই ব্যস্ততা
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়—
- অগ্রহায়ণে ধান কাটার পর পৌষে চারা রোপণ করা হয়।
- জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত চলে লতি তোলা—এ সময়টিই ভরা মৌসুম।
- ওই জ্যৈষ্ঠ মাসেই আবার নতুন করে চারা লাগানো হয়।
- পাঁচ–ছয় মাস ধরে স্থায়ীভাবে লতি পাওয়া যায়।
মৌসুমে ফলন বেশি থাকায় দাম কিছুটা কমে, তবে অন্য সময়ে কম ফসলেও দাম থাকে ভালো। এখানকার লতি ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ বহু এলাকায় যায়।
কৃষি বিভাগের মন্তব্য
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরোজ কান্তি রায় বলেন—
“গিয়াসনগরে লতি এখন খুবই লাভজনক ফসল। আগে দুই–তিন বিঘায় চাষ হতো, এখন মৌসুমে ১৫০ বিঘা জমিতে লতি হচ্ছে। রোগবালাই কম, দাম ভালো—এ জন্য মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। গিয়াসনগর এখন সত্যিই ‘লতির গ্রাম’ হয়ে উঠেছে।”
