জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট? পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত রাজনৈতিক অঙ্গন

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট


জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট নিয়ে দেশব্যাপী রাজনৈতিক অঙ্গন তীব্র বিতর্কে উত্তাল। ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ (সংবিধান সংস্কার) অনুমোদনের জন্য গণভোট নির্বাচনের আগে আয়োজন করা হবে নাকি নির্বাচনের দিনেই—এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্নমত পোষণ করেছে।

বিএনপি: নির্বাচনের আগে গণভোট অযৌক্তিক

বিএনপি নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের তীব্র বিরোধী। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটি ‘অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত’। তার যুক্তি, সংবিধান বাস্তবায়ন কোনো অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারে নেই।

ফখরুল বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করলে সময় ও খরচের অপচয় বাড়তে পারে। নির্বাচনের দিন গণভোট করলে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হয়। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অধ্যাদেশ বা সংশোধনের পথ গ্রহণ করা যেতে পারে।”

জামায়াত ও এনসিপি: স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য আগে গণভোট অপরিহার্য

জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে। তাদের মতে, গণভোটে জনগণের মতামত যাচাই করা হলে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “দেশের অনেক আসনে এখনও ‘গডফাদার’ রাজনীতি চলছে, যেখানে সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে না। নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের আসল মত প্রকাশ করতে পারবে।”

আইন উপদেষ্টা: চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের তারিখ ঘোষণা করার একমাত্র কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাব থাকবে না। সহায়তা দিতে পারে, কিন্তু চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রধান উপদেষ্টার হাতে থাকবে।”

ঐকমত্য কমিশনের দুটি বিকল্প

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দুটি বিকল্প সুপারিশ করেছে:
১. নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজন;
২. নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে জনগণ সমর্থন জানাবে।

সামাজিক মাধ্যম ও জনমত বিভাজন

রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত সামাজিক মাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে। ফেসবুকে ‘হ্যাঁ’ (গণভোট আগে আয়োজনের পক্ষে) এবং ‘না’ (বিপক্ষে) প্রচারণা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও ছাত্রদল নির্বাচনের আগে গণভোটের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, প্রবাসী ও নাগরিক সমাজ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গণভোটের পক্ষে মত প্রকাশ করছে।

সব মিলিয়ে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন হবে কি হবে না—এটাই এখন রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন