কবর থেকে নয়, আত্মীয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার — সিলেটে চাঞ্চল্য
হত্যা মামলায় নিরপরাধ ব্যবসায়ী হাজতে, তীব্র প্রশ্ন পুলিশি তদন্তে
অবিশ্বাস্য কিন্তু সত্যি—যে কিশোরকে দাফন করা হয়েছিল অশ্রুসিক্ত পরিবেশে, সে হঠাৎ ফিরে এলো জীবিত হয়ে! ওসমানীনগরের সেই কিশোর রবিউল ইসলাম নাঈম (১৪) কে শনিবার হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে কুলাউড়া থানা পুলিশ। খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা সিলেটজুড়ে তৈরি হয় তোলপাড়।
মৃত্যুর শোক, তারপর দাফন
ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের গদিয়ারচর গ্রামের কণাই মিয়ার ছেলে নাঈম ২৪ জুলাই হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। মা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
৩ আগস্ট কুলাউড়া থানার এলাকায় এক অজ্ঞাত কিশোরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের সদস্যরা সেটিকেই নাঈমের লাশ ভেবে শনাক্ত করে নিয়ে আসেন। ৫ আগস্ট শোকাহত পরিবেশে দাফনও সম্পন্ন হয়।
কিন্তু মামলার ব্যাপারে কুলাউড়া ও ওসমানীনগর থানা পুলিশের গড়িমসি ক্ষুব্ধ করে তোলে স্বজনদের। ৬ আগস্ট লাশ নিয়ে তারা সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে কুলাউড়া থানায় হত্যা মামলা হলে প্রধান আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বুলবুল ফকির। সেই থেকে তিনি কারাগারে বন্দি।
রহস্যের জট খুললো ২২ আগস্টে
সবাই যখন ধরে নিয়েছে নাঈম পৃথিবীতে আর নেই, তখনই ঘটল অঘটন। শুক্রবার (২২ আগস্ট) হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেল তাকে!
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত নাঈমকে হেফাজতে নেয় এবং শনিবার আদালতে জবানবন্দির জন্য পাঠায়। এসময় নাঈমের মা ও মামাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রশ্নের ঝড়—কাকে দাফন করা হয়েছিল?
নাঈম জীবিত ফিরে আসার খবরে এলাকায় দেখা দিয়েছে একের পর এক প্রশ্ন। তবে কাকে দাফন করা হলো ১৭ দিন আগে? লাশ শনাক্তে কেন এমন বিভ্রান্তি? আর মিথ্যা অভিযোগে কেন একজন নিরপরাধ ব্যবসায়ী কারাভোগ করছেন?
কুলাউড়া থানার এসআই মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আত্মীয় জুবেলের বাড়ি থেকে নাঈমকে উদ্ধার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আর থানার ওসি মো. ওমর ফারুক জানান, নাঈম আত্মগোপনে ছিল। পরিবারের সদস্যরা খুঁজে পেয়ে খবর দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। আগের লাশ উদ্ধার ও মামলা প্রসঙ্গে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এলাকায় চাঞ্চল্য, তদন্তে প্রশ্ন
এই ঘটনার পর গোটা এলাকায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কেউ বলছেন, পুলিশের অবহেলা ও গড়িমসিই এই নাটকীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন, এর পেছনে আরও রহস্য লুকিয়ে আছে।
তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—এই ঘটনা সিলেট অঞ্চলের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বিস্ময়কর ও রহস্যময় ঘটনার তালিকায় নাম লিখিয়ে নিয়েছে।