সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ ১২ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ


সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি 

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. মো. ইলিয়াস মিয়া, তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান মানিক, বিশ্বম্ভরপুরের ইউএনও মেরিনা দেবনাথ ও এসিল্যান্ড (ভূমি) শাহরুখ আলম শান্তনুসহ ১২ জন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে হাইকোর্ট। খনিজ বালি–পাথর চুরি ও লুট ঠেকাতে উচ্চ আদালতের পূর্বের নির্দেশনা অমান্যের অভিযোগে এই নোটিশ পাঠানো হয়।

মঙ্গলবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন। বিশ্বম্ভরপুরের মিয়ারচর এলাকার বাসিন্দা খুরশেদ আলমের পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।

পিটিশনে অভিযোগ করা হয়, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ইজারার নীতিমালা ভঙ্গ করে জাদুকাটা বালি মহাল-১, ২ ও আশপাশের এলাকায় নদীর তীর কেটে, ‘সেইভ’ মেশিন ব্যবহার করে খনিজ বালি–পাথর চুরি ও লুট চলছে। এসব অপতৎপরতায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের গোপনে সহযোগিতার অভিযোগও আনা হয়।

এছাড়া এসব লুট–চুরির ঘটনা আড়াল করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় থানার পক্ষ থেকে মাঝে-মধ্যে লোকদেখানো অভিযান পরিচালনার বিষয়টিও আদালতের নজরে আনা হয়।

কারা কারা বিবাদী
পিটিশনে বিবাদী করা হয়েছে— জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর সোয়াদ সাত্তার চৌধুরী, তাহিরপুরের ইউএনও মেহেদী হাসান মানিক, বিশ্বম্ভরপুরের ইউএনও মেরিনা দেবনাথ, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছাতক চাকমা, তাহিরপুর সার্কেলের এএসপি প্রণয় রায়, তাহিরপুরের এসিল্যান্ড শাহরুখ আলম শান্তনু, বিশ্বম্ভরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মেরিনা দেবনাথ, তাহিরপুর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন ও বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি মুখলেছুর রহমানকে।

ইউএনও ও এসিল্যান্ডের দাবি
তিনি জানান, যাদুকাটা নদীর তীর কাটা ও ইজারাবিহীন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন রোধে ৩০ দিনে টাস্কফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫৭টি অভিযান পরিচালনা করেছে।

তাহিরপুর ইউএনও মেহেদী হাসান বলেন, আদালতের আদেশের কপি এখনও হাতে পাননি।

অপরদিকে, গত শনিবার রাতের এক স্ট্যাটাসে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরুখ আলম শান্তনু জানান—১৯ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৫৩টি অভিযানে ২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড এবং ৮টি বাল্কহেড জব্দ করা হয়। জরিমানা আদায় করা হয় ২ লাখ টাকা।

স্ট্যাটাসে ‘জনসেবায় প্রশাসন’ উল্লেখ করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে গুজব বা ভ্রান্ত প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

ইজারার বড় অঙ্কের তথ্য
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের বৃহৎ বালুমহাল ‘যাদুকাটা-১ ও ২’ এ বছর ইজারা নেন শাহ রুবেল ও নাছির মিয়া। ইজারার মোট অর্থমূল্য ১০৭ কোটি টাকা।
গেল ৮ নভেম্বর থেকে পরবর্তী কয়েক দিনে নদীর তীর কেটে বালু লুটের ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার বলে উল্লেখ রয়েছে পিটিশনে।

আইনজীবীর মন্তব্য
রিটকারী খুরশেদ আলমের আইনজীবী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, “প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় পাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। এতে আদালতের পূর্বের আদেশ প্রতিপালিত হয়নি।”

ডিসির মন্তব্য
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, “দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি হয়নি। প্রতিদিন তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট পালাক্রমে অভিযান পরিচালনা করছেন। পাড় কাটার চেষ্টা পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, আদালতের নোটিশ এখনও হাতে পাননি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন