৫৫ বছর পরও প্রশ্ন—দেশের প্রথম মুক্ত অঞ্চল কি জকিগঞ্জ?

দেশের প্রথম মুক্ত অঞ্চল জকিগঞ্জের মানচিত্র

উবেদুল্লাহ তালুকদার :

মুক্তিযুদ্ধের কোন অঞ্চল প্রথম মুক্ত হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন আজও রয়ে গেছে। প্রচলিত ইতিহাসে বলা হয় ৬ ডিসেম্বর যশোরে প্রথম জাতীয় পতাকা ওঠে। তবে তার আগেই জকিগঞ্জ মুক্ত হয়েছিল বলে দাবি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষকদের। স্বাধীনতার ৫৫ বছর পরও এ দাবি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মতে ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় সেনারা জকিগঞ্জ এলাকায় আক্রমণ চালায়। পুরো রাত লড়াই হয়। ২১ নভেম্বর সকালে এলাকা মুক্ত হয়। ২২ নভেম্বর পতাকা উত্তোলন করে জকিগঞ্জকে স্বাধীন ঘোষণা করা হয়। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী জকিগঞ্জই দেশের প্রথম মুক্ত অঞ্চল।

যশোরের ঘটনাটি ভিন্নভাবে নথিবদ্ধ আছে। যশোর শহর পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয় ৬ ডিসেম্বর। সেদিনই জাতীয় পতাকা ওঠে। তাই সরকারি নথিতে যশোরকে প্রথম মুক্ত জেলা বলা হয়। এই তথ্য বহু বছর ধরে পাঠ্যপুস্তক এবং সরকারি প্রকাশনায় ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রশ্ন হলো জকিগঞ্জের মুক্ত হওয়ার ঘটনা কেন সরকারি নথিতে নেই। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে গবেষণা হলেও জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত যাচাই হয়নি। ২০১২ সালে জকিগঞ্জ প্রথম মুক্তাঞ্চল বাস্তবায়ন পরিষদ গঠিত হয়। তারা বিভিন্ন সময়ে স্মারকলিপি দেয়। দাবি এখনো ঝুলে আছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের মতে মাঠের বাস্তবতা স্বীকৃতি পায়নি। তাঁদের অংশগ্রহণ ও স্মৃতি আজও স্পষ্ট। কিন্তু সরকারি নথি অস্পষ্ট থাকায় ঘটনাটি ইতিহাসে জায়গা পায়নি। অনেকের মতামত হলো এ দাবির যাচাই এখন জরুরি।

জকিগঞ্জের মানুষ মনে করে স্বীকৃতি পেলে এলাকা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিক্ষামূলক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হতে পারবে। মুক্তিযোদ্ধারাও চান তাঁদের জীবদ্দশায় সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হোক।

৫৫ বছর পরও দেশের প্রথম মুক্ত অঞ্চল নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। জকিগঞ্জ কি সত্যিই প্রথম মুক্ত এলাকা—এই অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন