প্রাণের টুকরারে কোলেও নিতে পারলাম না — ভূমিকম্পেই থেমে গেল ছোট্ট ফাতেমার পথচলা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ক্যানেলপাড়ায় শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালের ভূমিকম্পে ধসে পড়া একটি উঁচু দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারায় মাত্র দশ মাস বয়সী ফাতেমা। সকালে নানাবাড়ি যাওয়ার জন্য মা-কন্যা ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। ভূমিকম্পের কয়েক সেকেন্ডের দোলনাই থামিয়ে দেয় সেই পথচলা।

দেওয়াল ধসের শব্দ শুনে প্রথমে ছুটে যান প্রতিবেশী ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, “সকালের ভূমিকম্পে ভয় আছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনি। দৌড়াইয়া গিয়া দেখি দেয়াল ভাইঙ্গা গেছে, নিচ থেকে দুইটা হাত দেখা যায়। ইট সরাইতে সরাইতে ছোট্ট মাইয়ারে বাইর করলাম, কিন্তু বাঁচাইতে পারলাম না।” কিছুক্ষণ পরে তিনি ফাতেমার মা কুলসুমকেও একই দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে থাকতে দেখেন। “তারেও বাইর করলাম,” বলেন তিনি।

আহত অবস্থায় কুলসুমকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তিনটি হাসপাতালে ছুটতে হয় ফাতেমার বাবা আব্দুল হককে। কোথাও খালি সিট না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েন তারা। ফাতেমার খালু মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “ইউএস বাংলা, ঢামেক, ন্যাশনাল—কোথাও সিট নাই। মাথায় আঘাত লইয়া মানুষ অচেতন, তাও ভর্তি নেবে না কয়। এখন বাড়ি নেব কেমনে?”

স্ত্রীর চিকিৎসার দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত থাকা আব্দুল হক জানতেই পারেননি, এ সময়েই তার মেয়ের দাফন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “প্রাণের টুকরারে দাফন করার সময় একবার দেখতেও পারলাম না। কোলেও নিতে পারলাম না। আল্লাহ, এমন দিন যেন কোনো বাবার ভাগ্যে না আসে।”

স্থানীয় বাসিন্দা তুহিন জানান, দুই মেয়েকেই মানুষ করে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখতেন আব্দুল হক। “গরিব মানুষের ফ্রি চিকিৎসা করবে—এমন আশা করত। কিন্তু ফাতেমা ডাক্তারের কাছে যাইতেও পারল না,” বলেন তিনি।

দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ইউএনও সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “দেয়ালটি নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হয়নি। ১০ ফুটের বেশি উঁচু এই দেয়ালে রডও নাই, পিলারও নাই। এমন দেয়াল ভারসাম্য রেখেই দাঁড়াতে পারে না।” তিনি জানান, ইউনিয়নে আরও কয়েকটি ভবন ও প্রাচীর নিয়ম না মেনে নির্মিত হয়েছে—এসব ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হবে। ফাতেমার দাফনের জন্য পরিবারকে ২০ হাজার টাকা সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।

হঠাৎ ধসে পড়া একটি দেয়ালেই থেমে গেল ফাতেমার জীবন। শোকের ভার ক্যানেলপাড়াজুড়ে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন