লন্ডনে দারুল হাদীস লতিফিয়ার গ্রাজুয়েশন সেরেমনি অনুষ্ঠিত

অর্ধশত আলেম ও হাফিজের পাগড়ি ও সনদ গ্রহণ


লন্ডন প্রতিনিধি 


দারুল হাদীস লতিফিয়া লন্ডনের উদ্যোগে আলিমী ও হিফয কোর্সের গ্রাজুয়েশন সেরেমনি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৬ নভেম্বর রবিবার লন্ডনের একটি অভিজাত হলে আয়োজিত বর্ণিল এ অনুষ্ঠানে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আলিম ও হাফিজ হিসেবে পাগড়ি, সনদ ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী বড় ছাহেব ফুলতলী। তিনি দরসে হাদীস ও গুরুত্বপূর্ণ নসীহত পেশের পাশাপাশি গ্রাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দেন।

ভার্চুয়ালি বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি ও দারুল হাদীস লতিফিয়ার ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি হযরত আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী।

এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটসের এক্সিকিউটিভ মেয়র জনাব লুৎফর রহমান। তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন এবং শিক্ষা, মানবতা ও কমিউনিটির উন্নয়নে দারুল হাদীস লতিফিয়ার অসাধারণ ভূমিকার প্রশংসা করেন।

মাহফিলে বক্তব্য রাখেন দারুল হাদীস লতিফিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী, গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ আহমদ চৌধুরী, কো-হেড টিচার হাফিজ মাওলানা আনহার আহমদ ও হাফিজ মাওলানা মুফতি মারুফ আহমদ।

হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী প্রধান অতিথির নসীহতে তাঁর তর্কসিদ্ধ ও নসীহতমূলক বক্তব্যে বলেন— “আলহামদুলিল্লাহ, আপনারা যে ইলম অর্জন করেছেন, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি মহামান্বিত আমানত। আজকের সম্মান গৌরবের পাশাপাশি দায়িত্বও—উম্মতকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্ব। ইলম তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা আখলাক, চরিত্র ও আমলের মাধ্যমে জীবনে প্রতিফলিত হয়। রাসূলে করীম (সা.)–এর সুন্নাহ আঁকড়ে ধরলে আল্লাহ ইলমে নূর ও গ্রহণযোগ্যতা দান করেন।”

ভার্চুয়াল বক্তৃতায় আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী বলেন “এই প্রতিষ্ঠানের সফলতায় শিক্ষক, গভর্নর ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিরলস পরিশ্রমই মূল চালিকা শক্তি। আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা ছাহেব কিবলা ফুলতলী (রহ.)–কে। তাঁর আত্মত্যাগের ফসলেই আজ এই মাদরাসা জ্ঞানবৃক্ষ হিসেবে বিকশিত হয়েছে।

প্রিয় গ্রাজুয়েটগণ—এ সনদ শুধু সম্মান নয়, দায়িত্বের প্রতীক। ইলমকে আমলে রূপান্তর করো, মানুষকে দীনের দিকে আহ্বান করো এবং খালিস নিয়তে কাজ করো।” 

টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুৎফর রহমান বলেন— “দারুল হাদীস লতিফিয়া আমাদের কমিউনিটিকে সুশিক্ষিত, আদর্শবান ও নৈতিকতায় সমৃদ্ধ প্রজন্ম উপহার দিচ্ছে। তাদের অবদান অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আজকের দিনটি গ্রাজুয়েটদের পাশাপাশি তাদের পরিবার, শিক্ষক ও কমিউনিটির জন্যও গৌরবের। সমাজের উন্নয়নে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন—এ প্রত্যাশা করছি।”

প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ হাসান চৌধুরী শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায় ও ত্যাগের প্রশংসা করে বলেন— “আজ আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীরা যে সফলতার দরজায় পৌঁছেছে তা সবার জন্যই আনন্দের। আমি সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের নিরলস পরিশ্রম স্মরণ করছি। আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী ছোট ছাহেব-এর অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও ত্যাগ মাদরাসার অগ্রযাত্রায় আজও প্রেরণার উৎস। গ্রাজুয়েটরা সমাজে দীনের আলো ছড়িয়ে দেবে—এটাই আমাদের আশা।”


গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেন “আজ আপনারা সেই ধারাবাহিকতায় যুক্ত হলেন—যারা আল্লাহর নূরের বাহক। আজ শেষ নয়, আরো বৃহত্তর যাত্রার সূচনা। পৃথিবী আপনাদের নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা ও সততার অপেক্ষায়। সত্যে দৃঢ় থাকুন, আচরণে কোমল হোন, আর আল্লাহকে কখনো ভুলে যাবেন না।”

মাওলানা আব্দুল ওয়াছি আরিফের সঞ্চালনায় মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন— আনজুমানে আল ইসলাহ ইউকে’র সভাপতি মুহাদ্দিস মাওলানা নজরুল ইসলাম, লতিফিয়া উলামা সোসাইটি ইউকে’র সভাপতি মাওলানা শেহাব উদ্দীন, লতিফিয়া ক্বারী সোসাইটি ইউকে’র সভাপতি মুফতি ইলিয়াস হোসাইন, সেক্রেটারি মুফতি আশরাফুর রহমান, লাতিফি হ্যান্ডস-এর সেক্রেটারি মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী, টাওয়ার হ্যামলেটসের ডেপুটি মেয়র মাইয়ুম তালুকদার, কাউন্সিলর সাইদ আহমদ, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়ের, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ডিরেক্টর জেনারেল দেওয়ান মাহদি, ট্রাস্টি গোলাম জিলানী মাহবুব, আব্দুল কালাম, মাওলানা মোশাররফ হোসাইন ইমরান, কমর উদ্দীন চৌধুরী পাপলু, বদরুল ইসলাম, হাফিজ মাওলানা কয়েছুজ্জামান, নজমুল হক, নজরুল ইসলাম গজনবীসহ প্রায় অর্ধ সহস্র অভিভাবক, আলেম-উলামা, শিক্ষক ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।

উপস্থিত ছিলেন— সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আব্দুল আউয়াল হেলাল, ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা কাহহার, ব্রিটিশ মুসলিম স্কুল বার্মিংহামের প্রিন্সিপাল মাওলানা এম.এ. কাদির আল হাসান, মাওলানা ফখরুল হাসান রুতবাহ, মানচেস্টার শাহজালাল মসজিদের চেয়ারম্যান আলহাজ আনসার উদ্দীন, খতিব মাওলানা খায়রুল হুদা খান, লোকমান আহমদ চৌধুরী সাদি, মাওলানা আব্দুল মালিক, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন, মাওলানা মো. আব্দুল কুদ্দুছ, মাওলানা ফয়সল আহমদ, কারি সুফিয়ান বিল্লাহ, খুরশিদ উল হক, হাজি আব্দুস সালাম, শওকত সিদ্দিকী, সামিরুল চৌধুরী, মশিউর রহমান শাহিন, সিরাজ খানসহ আরো অনেকেই।

অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক মুফতি ইলিয়াস হোসাইন, হযরত আল্লামা আব্দুল জলীল, সৈয়দ বদরুল হোসাইন এবং মরণোত্তরভাবে হাফিজ আব্দুল জলীল, ক্বারি আলতাফুর রহমান লতিফি ও মকবুল মিয়াকে সম্মাননা ট্রফি প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানের একটি অংশে মাদরাসায় নিয়মিত সহযোগিতা করায় ৮০ জন শুভাকাঙ্ক্ষীর হাতে ‘পেট্রন’ সম্মাননা সার্টিফিকেট তুলে দেন প্রধান অতিথি হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী বড় ছাহেব ফুলতলী।

মাহফিল উপলক্ষে একটি তথ্যসমৃদ্ধ স্মারক প্রকাশিত হয়। কিরাত পরিবেশন করেন হাফিজ আদিল উদ্দীন খান, হাফিজ মিনহাজুর রহমান ও হাফিজ রাহিল আলম নাহিদ। শেষে দেশ, জাতি ও গ্রাজুয়েটদের জন্য বিশেষ মুনাজাত করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন