জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সর্বশেষ সভায় প্রায় ১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩টি নতুন প্রকল্প অনুমোদিত হলেও এর কোনোটিতেই স্থান পায়নি প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের নাম। সরকারের এই সিদ্ধান্তে সিলেটবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এ অঞ্চল আবারও উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ এই বৈষম্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী সরকারের এই পদক্ষেপকে 'বৈষম্যমূলক ও অন্যায় আচরণ' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি সিলেটবাসীর প্রতি বৈষম্যমূলক ও অন্যায় আচরণ। সিলেটের ন্যায্য হিস্যায় উন্নয়ন বরাদ্দ রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।”
এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামী। বুধবার (২২ অক্টোবর) পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করে যে, অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১২টি একনেক সভায় ১২৯টি প্রকল্প অনুমোদন দিলেও তাতে সিলেটের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা মেগা প্রকল্প স্থান পায়নি।
বিবৃতিতে জামায়াতের নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেন, “জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সূতিকাগার সিলেটের সঙ্গে এমন বৈরী আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটি শুধু বৈষম্য নয়, বরং উন্নয়ন বঞ্চনার ধারাবাহিকতা।”
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল সিলেট দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত। অতীতের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলেও এ অঞ্চলের উন্নয়নে বড় কোনো মেগা প্রকল্প নেয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সেই একই পথে হাঁটছে।”
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, জেলা আমীর ও সিলেট-১ আসনের মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তারা জানান, এক বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও অন্তর্বর্তী সরকার সিলেটের উন্নয়নে কোনো মেগা প্রকল্প হাতে নেয়নি। সর্বশেষ একনেক সভায় সিলেট উপেক্ষিত থাকা সরকারের 'বিমাতাসুলভ আচরণের স্পষ্ট প্রমাণ'।
জামায়াত নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, সড়ক, রেল ও আকাশপথে সিলেটবাসী প্রতিনিয়ত সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তারা বিশেষ করে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের যানজটের কথা উল্লেখ করে বলেন, ৪–৫ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ১৪–১৫ ঘণ্টা। ট্রেনে বগি না বাড়ায় যাত্রীদের কষ্ট বেড়েছে এবং আকাশপথে বিমানের ভাড়া সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকাকে তারা সিলেটবাসীর ক্ষোভের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
উন্নয়ন বঞ্চিত থাকার এই ধারাবাহিকতা নিয়ে সিলেটজুড়ে স্থানীয় জনমনে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরকারের কাছে দ্রুত সিলেটের উন্নয়নে মেগা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল।
