সাপে ভরা জরাজীর্ণ ক্লিনিক: ভয় ও বিপাকে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ


সবুজ প্রান্ত ডেস্ক

বৃহস্পতিবার সকালে ঝালকাঠি জেলার একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতাধীন ঐ জরাজীর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকের দরজায় তালা ঝুলছে। কারণ—ক্লিনিকের ভেতরে বিষধর সাপের উপদ্রব!

বুধবার বিকেলে ক্লিনিকের মেঝে ও বাথরুমে একসঙ্গে পাঁচটি জাত সাপ দেখা যায়। দায়িত্বরত হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মারজিয়া খানম চিৎকার করলে স্থানীয়রা এসে সাপগুলো মেরে ফেলেন।

পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকের উপস্থিতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন মারজিয়া খানম। বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আতঙ্কিত কণ্ঠে তিনি বলেন,

“এর আগেও কয়েকবার সাপ দেখেছি। এবার একদম পায়ের কাছ দিয়ে গেছে! এখনো সাপ আছে ভেতরে। সাপ দূর না হলে এখানে বসা সম্ভব না—তাই ক্লিনিক বন্ধ রেখেছি।”

কিন্তু তাঁর এই কথার মধ্যেই হঠাৎ ক্লিনিকের ভেতর থেকে একটি কুচকুচে কালো সাপ বেরিয়ে আসে। ফোঁস ফোঁস শব্দে ফণা তোলে, স্থানীয়রা চিৎকার শুরু করলে সাপটি আবার দরজার নিচ দিয়ে ঢুকে যায়।

কাঁপতে কাঁপতে চোখের পানি মুছে মারজিয়া খানম বলেন,

“দেখলেন তো! কইছিলাম সাপ আছে!”

তিনি জানান, ১৪ বছর ধরে এমন ভয়ানক পরিবেশে গ্রামবাসীকে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।

এদিকে ক্লিনিক বন্ধ থাকায় স্থানীয়রা বিপাকে পড়েছেন। চিকিৎসা নিতে আসা বৃদ্ধা পারুল বেগম কষ্টভরা কণ্ঠে বলেন,

“জ্বর-কাশ আছে, একটু ওষুধ নিতে পারলাম না। ক্লিনিকটা বন্ধ থাকলে আমরা যামু কই?”

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবু বকর হাওলাদার জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে ক্লিনিকটি নির্মাণ করা হলেও এরপর আর সংস্কার হয়নি। মেঝেতে অসংখ্য গর্ত, ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে—এমনই করুণ অবস্থা।

“এই ক্লিনিকের ওপর আশপাশের ৫–৭ গ্রামের মানুষ নির্ভর করে। এটি বন্ধ থাকলে বড় বিপদে পড়ব আমরা।”

এ বিষয়ে ঝালকাঠির ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. রিফাত আহমেদ বলেন,

“জেলার ৯৩টি ক্লিনিকের বেশিরভাগই জরাজীর্ণ। সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি, তবে এখনো কোনো বরাদ্দ পাইনি।”

তিনি আরও জানান,

“শুধু এই ক্লিনিক নয়—আরও ১০–১২টি ক্লিনিকে সাপের আশ্রয়ের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় সমস্যা সমাধানে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন