ইসমে আজম: দোয়া কয়টি ও কিভাবে পড়বেন? জানুন হাদিসে বর্ণিত সেই শক্তিশালী দোয়া

ইসমে আজম বাংলা দোয়া ও উচ্চারণ

আমাদের জীবনে এমন কিছু সময় আসে যখন আমরা কঠিন সংকটে পড়ে যাই, যখন সব পথ বন্ধ হয়ে আসে। এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের মনের একান্ত কামনা-বাসনা পূরণ করার জন্য একটি বিশেষ পথের কথা বলেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর সেই বিশেষ পথটি হলো 'ইসমে আজম'। চলুন জেনে নিই, কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইসমে আজমের দোয়া কয়টি, এবং ইসমে আজম কিভাবে পড়তে হবে।

ইসমে আজম কী এবং এর ফজিলত

'ইসমে আজম' আরবি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। 'ইসম' শব্দের অর্থ 'নাম' এবং 'আজম' শব্দের অর্থ 'মহান' বা 'শ্রেষ্ঠ'। অর্থাৎ, ইসমে আজম মানে হলো আল্লাহর সেই মহান নাম, যার মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকলে বা যার ওসিলায় দোয়া করলে তিনি তা অবশ্যই কবুল করেন।

অনেক আলেম ও মুহাদ্দিস বলেছেন, আল্লাহর সত্তাগত নাম 'আল্লাহ' নিজেই ইসমে আজম। তারা বলেন, আল্লাহর অগণিত গুণবাচক নাম থাকলেও, মূল নাম হলো 'আল্লাহ'। তাই অত্যন্ত আন্তরিকতা, ভালোবাসা এবং ভক্তি সহকারে এই নাম ধরে আল্লাহকে ডাকলে তিনি তার বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেন না।

হাদিসে বর্ণিত ইসমে আজমের দোয়া

ইসমে আজম সম্পর্কে সবচেয়ে বিশুদ্ধতম একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফেজ ইবনে হাজার আল আসকালানী (রহ.) বলেছেন যে, ইসমে আজম সম্পর্কে এটিই সবচেয়ে বিশুদ্ধতম হাদিস।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি নামাজের পর এই দোয়াটি পাঠ করছিলেন:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আনতা আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এ মর্মে যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহ, আপনি ছাড়া সত্যিকারের কোনো মাবুদ নেই। আপনি একক ও স্বয়ংস্পূর্ণ। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তার সমকক্ষ কেউ নেই।

এই দোয়াটি শুনে নবী (সা.) বললেন, "নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি ইসমে আজম পাঠ করেছে, যার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কোনো কিছু চাওয়া হলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন না এবং এর মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকলে তিনি অবশ্যই তাতে সাড়া দেন।"

ইসমে আজম পাঠ করে দোয়া করার দুটি সহজ পদ্ধতি রয়েছে:

 ১. সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি: যেকোনো প্রয়োজনে আল্লাহকে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা নিয়ে শুধু 'আল্লাহ' নামে ডেকে মনের কথা পেশ করুন। এটি ইসমে আজমের সবচেয়ে সহজ রূপ।

 ২. বিস্তারিত পদ্ধতি: যদি আপনার হাতে সময় থাকে, তাহলে হাদিসে বর্ণিত সম্পূর্ণ দোয়াটি পাঠ করে আল্লাহর কাছে আপনার চাওয়া পেশ করুন।

দোয়া কবুলের জন্য কিছু মৌলিক শর্তও রয়েছে, যা মেনে চলা জরুরি। এর মধ্যে প্রধান হলো হালাল উপার্জন, আন্তরিকতা এবং কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে চাওয়া।

অন্যান্য ইসমে আজম

কিছু ওলামায়ে কেরাম ইসমে আজম হিসেবে কোরআনের অন্যান্য কিছু আয়াতের কথাও বলেছেন। যেমন:

• দোয়া ইউনুস: 'লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জালিমিন'। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এই দোয়া পাঠ করেও আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি তা কবুল করেন।

 • আয়াতুল কুরসি: অনেক মুহাদ্দিস বলেন, আয়াতুল কুরসির মধ্যেও ইসমে আজম রয়েছে।

জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতে ইসমে আজম পাঠ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা আমাদের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ। যদি কোনো কারণে আপনার দোয়া তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ না হয়, তবে হতাশ হবেন না। বিশ্বাস রাখুন যে, এর বিনিময়ে আল্লাহ আপনার জন্য আখিরাতে উত্তম কিছু প্রস্তুত করে রেখেছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ইসমে আজমের মাধ্যমে তার কাছে দোয়া করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন