শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিতে দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় পরিবর্তন আসছে। পুরোনো নিয়মে শিক্ষকরা নিবন্ধন সনদ সংগ্রহের মাধ্যমে শূন্য পদে আবেদন করতেন। নতুন নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ সরাসরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হবে, যা বিসিএস পরীক্ষার মতো ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৩৮ হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ২৯,১৬৪টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত, যেখানে সাড়ে ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এতদিন শূন্যপদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল দীর্ঘ ও জটিল। প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিবন্ধন সনদ নিতে হতো। এরপর এনটিআরসিএ (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শূন্য পদে আবেদন নিতো এবং নিয়োগের সুপারিশ করত।
২০০৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রদান করছে। প্রথম ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির হাতে। ২০১৫ সালের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠানটির হাতে নিয়োগের সুপারিশ করার ক্ষমতা আসে। এরপর থেকে পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১,৩২,৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন (এনটিআরসিএ তথ্য অনুযায়ী)।
নতুন নিয়মে প্রার্থীরা প্রথমে নির্বাচনী পরীক্ষা (লিখিত বা এমসিকিউ) দেবেন। নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রতিটি ধাপে ন্যূনতম ৪০% নম্বর প্রয়োজন। মৌখিক পরীক্ষার সর্বাধিক নম্বর রাখা হয়েছে ২০।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে শূন্য পদের দ্বিগুণ প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। চূড়ান্ত ফলাফলে শূন্য পদের অতিরিক্ত ২০% প্রার্থীও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। উত্তীর্ণদের তিন বছরের মেয়াদের সনদপত্র দেওয়া হবে। তবে মেধাক্রম নির্ধারণ হবে কেবল নির্বাচনী পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে।
এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, নতুন বিধিমালা জারি হলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে এবং দীর্ঘসূত্রতা কমবে। কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো প্রক্রিয়া তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে মামলা–সংক্রান্ত জটিলতা কমে আসে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই পরিবর্তন শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করবে বলে আশাবাদী চাকরি প্রত্যাশীরা। তবে বয়সসীমা (৩৫ বছর) ও পরীক্ষার কাঠামো বিষয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে তাদের মধ্যে।