লাশ হয়ে ফিরছে সামাদ: ভেঙে পড়েছে এক স্বপ্নভাঙা পরিবার


জকিগঞ্জ প্রতিনিধি:

“বাবা, আমাকে দেশে ফিরিয়ে নাও… আমাকে অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয়েছে”—বিদেশে যাওয়ার মাস দুয়েক পর এমন আর্তনাদে ভেঙে পড়েছিলেন আব্দুস সামাদ। কিন্তু সেই কান্না দেশে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। ফিরলেন ঠিকই—তবে কাফনে মোড়ানো নিথর দেহ হয়ে।

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের আমলশিদ গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনের কনিষ্ঠ সন্তান সামাদ (২৫) স্বপ্ন দেখেছিলেন পরিবারের সচ্ছলতা আনার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশায় প্রায় ৮ মাস আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন দালাল কবির আহমদ অনিকের মাধ্যমে। কিন্তু সেই প্রবাসই হয়ে উঠল তার মৃত্যুকূপ।

সামাদের পরিবার জানায়, সৌদি পৌঁছানোর পর থেকেই শুরু হয় তার ওপর অমানবিক নির্যাতন। কাজের কোনো ব্যবস্থা না করেই অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য করা হয় তাকে। একটি অন্ধকার রুমে তাকে আটকে রাখা হতো দিনের পর দিন। ২৪ মে, সেই অমানবিক জীবন থেকেই চির মুক্তি পান সামাদ।

পরিবারের অভিযোগ, মৃত্যুর পরও খবরটি গোপন রাখে অনিক। সামাদের মৃত্যুর কথা জানানো হয়নি পরিবারের কাউকে। পরবর্তীতে গোপনে খবর পেয়ে তারা জানতে পারেন নির্মম সত্যটি। এরপরই অনিক ও তার পিতা অহিদুর রহমান আইদুর গভীর রাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছে।

বিধ্বস্ত পিতা আব্দুল মতিন বলেন, “আমার ছেলেকে নিয়ে বড় স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নের যেন নির্মম অপমৃত্যু ঘটেছে। মৃত্যুর আগের শেষ কথাগুলো এখনো কানে বাজে—ছেলেটা কি পরিমাণ কষ্টে ছিল, তা কল্পনাতেও আসে না। আমাদের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেও অপরাধীরা এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দালাল অনিক ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রলোভনের মাধ্যমে অসহায় পরিবারদের সন্তানদের বিদেশ পাঠানোর নামে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকেই আর ফিরতে পারেননি, কেউ ফিরেছেন পঙ্গু হয়ে, কেউ নিথর দেহে।

এদিকে, সামাদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে অনিকের পক্ষ থেকে এক ধরনের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়—তার বা তার পরিবারের বিরুদ্ধে যেন কোনো মামলা না হয়, এমন মুচলেকা দিতে হবে! এমন অমানবিক চেষ্টায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় এলাকাবাসী। মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষরের মাধ্যমে তারা দ্রুত মরদেহ ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়।

অবশেষে সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সামাদের মরদেহ বুধবার (২ জুলাই) রাত ৯টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টায় নিজ গ্রাম আমলশিদ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এ ঘটনায় জকিগঞ্জবাসীর হৃদয় ভেঙে গেছে। সর্বস্তরের মানুষ অনিক ও তার পিতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাদের ভাষায়—“এই চক্র বহু পরিবারকে ধ্বংস করেছে। সামাদ যেন এই প্রতারণার শেষ বলি হয়। এখনই তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন