জকিগঞ্জ প্রতিনিধি:
বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল পরিবারকে সুখ-স্বচ্ছলতা দেওয়ার, চোখেমুখে ছিল সম্ভাবনার আলো। কিন্তু সৌদি আরবের বুকে সেই স্বপ্ন রয়ে গেল লাশ হয়ে।
জকিগঞ্জ উপজেলার আমলশীদ গ্রামের তরুণ আব্দুস সামাদ (৩০) দালালের মাধ্যমে পাড়ি জমিয়েছিলেন পরবাসে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—প্রবাসে গিয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় এই তরুণের। অথচ মৃত্যুর একমাস পেরিয়ে গেলেও আজও তার লাশ ফিরে আসেনি প্রিয়জনদের কাছে।
প্রিয় সন্তানের লাশ ফিরে পাওয়ার আকুতি নিয়ে প্রতিদিনই বুক ভাঙা কান্নায় দিন কাটাচ্ছেন বৃদ্ধ বাবা-মা। আর এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। নিহত সামাদের লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং ঘটনার জন্য দায়ী দালাল চক্রের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিতে শনিবার (২১ জুন) বিকেলে আমলশীদ বাসস্টেশনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করেন এলাকাবাসী।
"আমার ছেলে সৌদি গেল স্বপ্ন নিয়ে, ফিরবে লাশ হয়ে—এ কেমন নিষ্ঠুরতা!"—কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন আব্দুস সামাদের পিতা আব্দুল মতিন মেম্বার।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক ইউপি সদস্য আতাউর রহমান এবং সঞ্চালনায় ছিলেন মাওলানা সাদিকুর রহমান সিদ্দিকী। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করেন হাফিজ আরিফ আহমদ।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন—ব্যবসায়ী জমিল আহমদ, হাফিজ জিল্লুর রহমান, বদরুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, জিয়াউর রহমান জিয়াব, আক্তার হোসেন রাজন, ছাত্রনেতা জাহিদ আহমদ নাহিদ, গুলজার হুসেন, মনসুর আহমদ, শিপন আহমদ লায়েক প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, “একটি সন্তানের লাশ ফিরে না পাওয়ার বেদনা শুধু একজন বাবার নয়—পুরো সমাজের ব্যর্থতা। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই—অবিলম্বে আব্দুস সামাদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হোক এবং দালাল আইদুর ও তার ছেলে অনিককে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অনেকের চোখে ছিল অশ্রু, আর হৃদয়ে ছিল ক্ষোভ ও অসহায়তা। একটি পরিবার তাদের প্রিয় সন্তানকে হারিয়েছে—এ যেন শুধু একটি মৃত্যুর গল্প নয়, এটি প্রতারণা ও অবহেলার জ্বালা নিয়ে লেখা এক বাস্তব ট্র্যাজেডি।