প্রাকৃতিকভাবে মশা নিধনে সাফল্য, মিললো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
মশা মারতে আর বিষ নয়, এবার কাজে লাগবে গাছের পাতা! এমনই অভিনব এক পরিবেশবান্ধব গবেষণায় দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন সিলেটের জকিগঞ্জের এক তরুণ। থানাবাজার এলাকার হাজারীচক গ্রামের ব্যবসায়ী এস. আলমের সন্তান নুরুল আমিন প্রমাণ করে দিয়েছেন, ইচ্ছা থাকলে দেশি উদ্ভিদ দিয়েই মশা নিধন সম্ভব—তাও আবার পরিবেশকে বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিমেল অ্যান্ড ফিশ বায়োটেকনোলজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নুরুল আমিন স্নাতক পর্যায়ে জিপিএ ৩.৮১ পেয়ে বিভাগের মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত অধ্যাপক কাজী মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর তত্ত্বাবধানে তিনি গবেষণা করেন এক চমকপ্রদ বিষয়ে—গাছের পাতার নির্যাস দিয়ে মশকনিধন!
নুরুল আমিন জানান, গবেষণায় তাঁরা ব্যবহার করেছেন ‘সিঙ্গাপুর ডেইজি’ নামের একটি গাছ, যার পাতা থেকে সংগ্রহ করা নির্যাসে পাওয়া গেছে ব্যাকটেরিয়া ও মশা নিধনের শক্তিশালী গুণাবলি। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, এই নির্যাস ব্যবহারে মশার বংশবিস্তার কার্যকরভাবে ঠেকানো সম্ভব। আর এই অভিনব আবিষ্কার আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও প্রশংসিত হয়েছে—‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন অ্যাডভান্স অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ ২০২৪’-এ গবেষণাটি পুরস্কৃত হয়।
নুরুল আমিন বলেন,
“রাসায়নিক কীটনাশক যেমন পরিবেশ ধ্বংস করে, তেমনি মানবদেহেও এর প্রভাব ভয়াবহ। আমাদের গবেষণা প্রাকৃতিকভাবে মশা নিয়ন্ত্রণের এক নতুন পথ দেখাচ্ছে। এই পদ্ধতি জনস্বাস্থ্যের জন্য যেমন নিরাপদ, পরিবেশের জন্যও তেমন সহায়ক।”
শুধু নুরুল আমিন নন, একই বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিন বরকতউল্লাহর গবেষণাও কম নয়। তিনি সিলেট অঞ্চলের মাটি থেকে ‘লাইসিনিবেসিলাস’ নামের এক ব্যাকটেরিয়া আলাদা করেছেন, যা মশার লার্ভা ধ্বংসে অত্যন্ত কার্যকর। আধুনিক মলিকুলার প্রযুক্তি দিয়ে শনাক্ত এই ব্যাকটেরিয়া শুধু মশাকেই আক্রমণ করে, উপকারী অন্য পোকামাকড় বা পরিবেশের ক্ষতি করে না।
তানজিন বলেন,
“বর্তমানে আমরা যে বিটি ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করি, তা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় এবং তা সব ধরনের পোকামাকড়ের ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু আমাদের আবিষ্কৃত ব্যাকটেরিয়া শুধু মশার ওপর কাজ করে, যা তুলনামূলক সস্তা, নির্ভরযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব।”
দেশি মেধার জয়গান
জকিগঞ্জের মতো সীমান্তবর্তী অঞ্চলের এক তরুণ—নুরুল আমিন—দেখিয়ে দিলেন, গবেষণার জগতে স্থান পেতে কেবল প্রতিভা নয়, চাই অধ্যবসায় ও দেশপ্রেম। তার গবেষণা শুধু দেশের নয়, সারা বিশ্বের মশাবাহিত রোগপ্রবণ অঞ্চলের জন্য একটি বড় উপহার হতে পারে।
এই তরুণদের সাফল্য প্রমাণ করে—বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে দেশের সমস্যার সমাধান সম্ভব, যদি আমরা তাদের পাশে দাঁড়াই।
মশা মরবে, মানুষ বাঁচবে, পরিবেশও রক্ষা পাবে—এই হোক আমাদের নতুন অঙ্গীকার!