মতিউর রহমান, গোয়াইনঘাট :
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক এখন চরম অবহেলা আর দুর্ভোগের প্রতীক। এই সড়ক দিয়েই যাতায়াত করতে হয় জনপ্রিয় পর্যটন স্পট বিছানাকান্দি ও পান্থুমাই-এ। কিন্তু দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও সংস্কার কাজে ধীরগতির কারণে এই অঞ্চলের পর্যটন খাতে পড়েছে বিরূপ প্রভাব।
ঈদের ছুটিতেও নেই পর্যটক, ব্যবসায় মন্দা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বিছানাকান্দি ও পান্থুমাই এলাকায় এবারের ঈদে পর্যটকদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পর্যটক প্রায় নেই বললেই চলে। রেস্টুরেন্ট, গেস্ট হাউজ ও নৌপরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
তারা বলছেন, রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারণে পর্যটকরা বিকল্প গন্তব্য বেছে নিচ্ছেন, যেমন সাদাপাথর, রাতারগুল ও জাফলং—যেখানে পৌঁছানো অপেক্ষাকৃত সহজ ও নিরাপদ।
সড়কের বেহাল দশা: জনদুর্ভোগ চরমে
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের অধিকাংশ জায়গায় পিচ উঠে গেছে, সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। কোথাও আবার ভাঙা কালভার্ট ও জলমগ্ন অংশে হাঁটাচলার অনুপযোগী অবস্থা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রী, রোগী, পর্যটকসহ সর্বসাধারণ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
দুই বছরেও অর্ধেক কাজ শেষ নয়
২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি সালুটিকর-তোয়াকুল-বঙ্গবীর-গোয়াইনঘাট সড়কে আরসিসি ঢালাই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দুই ধাপে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ২৯ কোটি টাকা। কাজটি পায় ডিসিএল অ্যান্ড এমডিএইচ (জেবি) নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত, যা পরে বাড়িয়ে মে পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়েরও অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, ৩০ শতাংশও হয়নি; বরং অনেক স্থানে নতুন ঢালাইকৃত অংশে ফাটল ধরেছে, উঠে গেছে ঢালাই।
মানববন্ধনে প্রতিবাদ ও হুঁশিয়ারি
চরম দুরবস্থার প্রতিবাদে গত ১৪ জুন সালুটিকর বাজারে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি। বক্তারা বলেন, “বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজের গতি বাড়ানো হয়নি। আগামী ২৪ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে কঠোর আন্দোলনে যাব।”
৩ দশকের পুরনো প্রতিশ্রুতি এখনও অপূর্ণ
প্রসঙ্গত, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ১৯৯৪ সালে এই সড়কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। দীর্ঘ ৩০ বছরেও সড়কটি পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন পায়নি। রাস্তার এমন করুণ দশায় ব্যাহত হচ্ছে এলাকার শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসা-বাণিজ্য।
কাজ চলছে ধীরগতিতে
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলী হাসিব আহমেদ সবুজ প্রান্ত-কে জানান, “বর্তমানে কাজ চলছে। বিল ও ফান্ডিং জটিলতার কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এক পাশে এক পাশে করে কাজ করতে হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করছি।”
পর্যটন সম্ভাবনায় বাধা ‘রাস্তা’
পর্যটনকে ঘিরে যেখানেই উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হোক না কেন, যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত না হলে বাস্তবে তা সফল হয় না। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের বাস্তব চিত্র পর্যটন সম্ভাবনার অন্যতম বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।