সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৩১ মে) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাত্র ১২ ঘণ্টায় ১৯৮.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দিনভর এই বিরামহীন বর্ষণে নগরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ পানির নিচে চলে যায়।
বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে নগরের জিন্দাবাজার, ক্বিন ব্রিজ, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, টিলাগড়, উপশহর, লালদিঘীরপাড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকা। এসব এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমে যায়, অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকাতেও পানি ওঠে যাওয়ায় রোগী ও সেবাপ্রার্থীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
শুধু শহরেই নয়, জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সিলেট বিভাগের সাতটি প্রধান নদীর ১৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, যার বেশিরভাগই বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।
সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বেড়ে হয়েছে ১১.৬৬ মিটার, যেখানে বিপদসীমা ১২.৭৫ মিটার। গত ৪৮ ঘণ্টায় এখানে পানির উচ্চতা বেড়েছে ৩.৩৭ মিটার। সিলেট পয়েন্টেও পানি ক্রমাগত বাড়ছে এবং বর্তমানে ৯.৩১ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদসীমার মাত্র ১.৪৯ মিটার নিচে।
এছাড়া কুশিয়ারা, ধলাই, সারি, পিয়াইন ও গোয়াইন নদীর বিভিন্ন পয়েন্টেও পানি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১০ মিলিমিটার এবং তার আগের দিন ২১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যার প্রভাব সিলেটের নদনদীগুলোতে পড়ছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) একটি বিশেষ জরুরি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। সিসিক ভবনের দ্বিতীয় তলার ২০৫ নম্বর কক্ষে স্থাপন করা এই কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে আছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর, প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কর্মকর্তাদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেট অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, আগামী তিন দিন ভারী বর্ষণ ও দমকা হাওয়া অব্যাহত থাকবে। ফলে পাহাড়ি ঢল ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে নতুন করে প্লাবন সৃষ্টি হতে পারে।