অন্যের জমি দখলের শাস্তি—দুনিয়ায় অপমান, পরকালে গজব

ইসলামের দৃষ্টিতে জমি দখলের ভয়াবহ পরিণতি এবং আজকের সমাজে তার বাস্তব প্রতিফলন

জুবায়ের আহমদ 
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে জমিজমা নিয়ে বিরোধ একটি পুরনো সমস্যা। সামান্য একটি সীমানা কিংবা এক বিঘত জমি নিয়েও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, মামলা-মোকদ্দমা এবং চরম অশান্তির ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ ইসলাম ধর্ম এ বিষয়ে অত্যন্ত স্পষ্ট ও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীসের আলোকে আমরা দেখতে পাই, জমি-জমা সংক্রান্ত সীমালঙ্ঘন ও অন্যায় দখলের পরিণতি শুধু দুনিয়ার আদালতে নয়, পরকালের বিচারেও ভয়াবহ শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

এক বিঘত জমির অন্যায় দখল—সাত তল জমির বোঝা ঘাড়ে!
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত (একহাত) জমিও গ্রহণ করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তল জমি পর্যন্ত তা ঘাড়ে বহন করতে হবে।” (সহীহ বুখারী: ২৪৫২, মুসলিম: ১৬১০)। ভাবুন একবার—দুনিয়ার একটি হাত পরিমাণ জমি দখল করার কারণে কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে সাত তলা জমির ভার বহন করতে হবে! এটি নিছক কোনো অলঙ্কারিক বর্ণনা নয়, বরং এক বাস্তব চিত্র যা অন্যায়ের শাস্তির গম্ভীরতা বুঝিয়ে দেয়।

সীমালঙ্ঘন মানেই আল্লাহর লানত:

জমির সীমানা অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করার বিষয়েও রাসূল (সা.) কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, “যে ব্যক্তি অন্যের জমির সীমা অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর লানতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (আবু দাউদ: ৩০৫৭)। অর্থাৎ এমন ব্যক্তি শুধু দুনিয়ার আইনভঙ্গকারী নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকেও তার ওপর অভিশাপ বর্ষিত হবে।

সমাজে এর বাস্তব প্রতিফলন: 

আমাদের গ্রামে-গঞ্জে দেখা যায়, প্রভাবশালী কেউ যখন তার অবস্থান বা অর্থবলের অপব্যবহার করে গরিব প্রতিবেশীর জমি জোরপূর্বক দখল করে, তখন কেবল সেই ব্যক্তি নয়—পুরো সমাজ একধরনের নৈতিক পতনের মধ্যে পড়ে। ন্যায়বিচারের বদলে জুলুমের সংস্কৃতি চালু হয়। একসময় সমাজের দুর্বল মানুষেরাও বিচার না পেয়ে হতোদ্যম হয়ে পড়ে। অথচ এই অন্যায় দখলকারী হয়তো ভাবছে, সে শক্তিশালী বলে পার পেয়ে যাবে। কিন্তু কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি আল্লাহর আদালতে বিচারিত হবে, যেখানে কোনো সুপারিশ বা লবিং কাজ করবে না।


দুনিয়ার লাভ, কিন্তু পরকালের ক্ষতি:

জমি দখল করে হয়তো কেউ সাময়িকভাবে আর্থিক লাভবান হতে পারে, কিন্তু সেই সম্পদ তার জন্য বরকতময় হয় না। বরং পরিবারে অশান্তি, রোগ-ব্যাধি, অপচয় এমনকি সন্তানদের অবাধ্যতা দেখা দিতে পারে। আর পরকালের ভয়াবহ শাস্তি তো রয়েছেই। তাই ইসলাম চায়, প্রত্যেক ব্যক্তি ন্যায়ের পথে চলুক, অন্যের অধিকার রক্ষা করুক এবং নিজের সীমারেখায় থেকে জীবন পরিচালনা করুক।

উপসংহার: আজ আমাদের সমাজে সত্যিকারের শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে জমি-জমা নিয়ে এই জুলুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। আল্লাহর হুঁশিয়ারি ও রাসূল (সা.)-এর সতর্কবাণীগুলো শুধু বইয়ের পাতায় নয়, আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। অন্যায় দখল থেকে বিরত থাকা শুধু একটি আইনি বা সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি ঈমানী দায়িত্ব, যার দায়িত্বশীলতা কিয়ামতের দিনও গণনা করা হবে।

আসুন, অন্যের অধিকার রক্ষা করে ইহকাল ও পরকাল—দু’টি জগৎকেই নিরাপদ করি।

....................................

লেখক পরিচিতি:

জুবায়ের আহমদ, সাংবাদিক ও কলাম লেখক। জকিগঞ্জ প্রতিনিধি—দৈনিক ইনকিলাব, The Muslim Times (ইংরেজি), ও দৈনিক পুণ্যভূমি। সম্পাদক ও প্রকাশক, সাপ্তাহিক সবুজ প্রান্ত, সিলেট।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন