সুনামগঞ্জের আকাশ যেন হঠাৎ করেই ভারী হয়ে উঠল। তিনদিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে নদীর বুকে ভেসে উঠল জমিয়ত নেতা মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরীর (৫২) নিথর দেহ। যে মানুষটি গত ক’দিন আগেও এলাকায় ইসলামী আন্দোলন ও জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন, তিনিই আজ শীতল লাশ হয়ে ফিরে এলেন।
শুক্রবার সকালে দিরাই উপজেলার একটি নদী থেকে এই মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে ছুটে যান তার স্বজনরা। স্তম্ভিত হয়ে যান সকলে—যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তাদের প্রিয়জন আর জীবিত নেই। তার ফুপাতো ভাই জুনেদ আহমদ কাঁপা কণ্ঠে নিশ্চিত করেন এ খবর।
দিরাই থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরী শুধু একজন আলেমই ছিলেন না; তিনি ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সহ-সভাপতি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসন থেকে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে নেমে জনগণের কাছে যাচ্ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল মানুষের সেবা করা, রাজনীতির মাধ্যমে দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার বড়মোহা দারুল উলুম ইসলামিয়া আরবিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন তিনি। গ্রামের গর্ব গাজীনগরের এই সন্তান মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালেই নিখোঁজ হন। সেদিন রাত ১০টার দিকে পরিবারের কাছে সুনামগঞ্জ শহরে যাওয়ার কথা বলেই তিনি বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু এরপর থেকে কোনো খোঁজ মেলেনি। ফোনও ছিল বন্ধ।
অন্তরের শূন্যতায় ভেঙে পড়া স্ত্রী রুবি বেগম পরদিন শান্তিগঞ্জ থানায় জিডি করেন। স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আশায় বৃহস্পতিবার এলাকাবাসী বিক্ষোভে নামেন। কিন্তু সবার স্বপ্নই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল শুক্রবার সকালে। নদীর বুক থেকে যখন উদ্ধার করা হলো প্রিয় মাওলানা মুশতাকের প্রাণহীন দেহ—শোকের ছায়া নেমে এলো গোটা জেলায়।