জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভাঙন, বন্যার রেড এলার্ট জারি

জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভাঙনের ছবি, বন্যা প্লাবিত এলাকা ও পানি বৃদ্ধি, জরুরি রেড এলার্ট সতর্কতা।

সিলেটের জকিগঞ্জে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ভারতের বরাক নদী হয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার অনেক ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। সোমবার রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের বাঁধ, ভোররাতে বাখরশাল গ্রামের বাঁধ এবং সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল এলাকার বাঁধ ভেঙে যায়। এতে করে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। এসব এলাকার প্রতিটি ভাঙন প্রায় ৩০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত, ফলে আশপাশের গ্রামগুলো মারাত্মক প্লাবনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তিনটি ভাঙনের স্থানে প্রবল গতিতে পানি প্রবেশ করছে জনবসতিতে। স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বালুভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও পানির চাপে অনেক জায়গায় তা কার্যকর হচ্ছে না। কুশিয়ারার পানিতে ইতোমধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও সাধারণ মানুষদের বসতঘর। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে জকিগঞ্জের পৌর শহরের নিকটবর্তী কেছরী গ্রাম দিয়ে পানি শহরের দিকে ঢুকে পড়েছে এবং মাইজকান্দী গ্রামের ডাইকের একটি অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে শহরেও জলাবদ্ধতার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সোমবার সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার চেয়ে ১৮৪ সেন্টিমিটার বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এই পয়েন্টে রেড এলার্ট জারি করেছে, যা নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে আকস্মিক প্লাবনের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। ছবড়িয়া, সেনাপতিরচক, ইছাপুর, পিল্লাকান্দী, আমলশীদসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত অর্ধশতাধিক পয়েন্টে নদীর পানি বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর পানি বৃদ্ধি শুরু হলেও সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ নজর দেয়নি এবং বারবার বালুর বস্তার দাবি জানানো হলেও তা পৌঁছায়নি। ফলে সাধারণ মানুষকেই বাধ্য হয়ে বাঁধ রক্ষায় নেমে পড়তে হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেত।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে এবং বন্যাকবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কিছু এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে ঠিক কতগুলো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে সে তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে কুশিয়ারার বাড়তি পানির চাপে ইতোমধ্যে জকিগঞ্জ বাজারেও পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ। পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন