জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া। স্থানীয়রা জানান, আগে গ্রামের বৃষ্টির পানি পার্শ্ববর্তী একটি খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু খালটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে পড়ায়, সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক সেটি বন্ধ করে দেন। অন্যদিকে, আরেকটি পার্শ্ববর্তী বাড়ির ভেতর দিয়ে পানি গড়িয়ে সেই খালে গিয়ে পড়ত। কিন্তু ওই বাড়ির মালিকরাও নিজেদের জমি রক্ষার্থে সেখানে মাটি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, অতীতে ওই এলাকায় একটি ছোট খাল বা নালা ছিল, যা ওই বাড়ির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মূল খালে গিয়ে মিশত। কালের বিবর্তন ও অনিয়ন্ত্রিত গৃহনির্মাণের কারণে সেই খালটি বিলুপ্ত হয়ে বর্তমানে বাড়ির অংশে পরিণত হয়েছে।
ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। শিশু-কিশোররা স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে পারছে না, রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারছে না—এমনকি গ্রামের সবচেয়ে বড় গোরস্থানটিও পানির নিচে। এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “গোরস্থান পর্যন্ত ডুবে গেছে। এখন কেউ মারা গেলে কবর দিতেও কষ্ট হবে।”
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মঈন বলেন, “পরিকল্পনাহীনভাবে বাড়িঘর নির্মাণ এবং প্রতিবেশীদের অসহযোগিতার ফলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমি রাস্তার পাশ দিয়ে ড্রেন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু জমির মালিকরা বাধা দিচ্ছেন।” তিনি আরও জানান, “যদি জায়গাটি সরকারি হয়, তাহলে বরাদ্দ না থাকলেও আমি ব্যক্তিগত অর্থায়নে কাজটি করব। আর না হলে, প্রয়োজনে জমি কিনেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করব।”
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুল হক বলেন, “গত দুই-তিন বছর ধরে এই সমস্যা চলছে। বারবার বলা সত্ত্বেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এবার চেয়ারম্যানের আশ্বাসে আমরা পাশে আছি।”
কসকনকপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহমান জানান, “অনেকদিন ধরেই এলাকাবাসী আমাদের কাছে অভিযোগ করে আসছেন। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেছি, কিন্তু ফল মেলেনি। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তারা যেন অনতিবিলম্বে জায়গাটি পরিদর্শন করে বিষয়টি দেখে যায়।”
জলাবদ্ধতার কারণে বাজারে যাওয়ার প্রধান সড়কটিও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এলাকার অন্যান্য বাসিন্দারাও দুর্ভোগে পড়েছেন। পাশাপাশি জমে থাকা পানিতে মশার উপদ্রব বেড়েছে এবং শিশুরা পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
গ্রামবাসীরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, একটি খাল বা পাইপলাইন চালু করলেই এই দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে যাবে।