মহার্ঘ ভাতা জুলাই থেকে কার্যকর? সরকার ২০ মে সিদ্ধান্ত নেবে


চার মাসের নিরবতার পর আবারও সামনে এসেছে সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা ইস্যু। এই মহার্ঘ ভাতা নিয়ে বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চলছে নীরব আলোড়ন। সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান রক্ষা এবং মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে আবারও মহার্ঘ ভাতা প্রদানের পরিকল্পনায় ফিরেছে সরকার।

গত ডিসেম্বরেই গঠিত হয় সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি পর্যালোচনা কমিটি, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মহার্ঘ ভাতা সংস্থান ও কাঠামো নির্ধারণ। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব ছিলেন এই মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক। কমিটি তাদের পর্যালোচনার ভিত্তিতে গ্রেডভিত্তিক ১০ থেকে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করে।

জানুয়ারি মাস থেকেই এই মহার্ঘ ভাতা কার্যকরের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকারের পক্ষ থেকে মহার্ঘ ভাতা বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখা হয়। অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যে সে সময় স্পষ্ট হয় যে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

তবে এবার নতুন অর্থবছরকে সামনে রেখে ২০ মে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছে অর্থ মন্ত্রণালয়, যেখানে মহার্ঘ ভাতা ইস্যুটি গুরত্বসহকারে আলোচনা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০১৫ সালে বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করা হয়েছিল। এরপর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা মহার্ঘ ভাতা পায়নি। অথচ এ সময়ের মধ্যে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এই বাস্তবতায় সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা প্রবর্তন এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রস্তাবিত মহার্ঘ ভাতা কাঠামো অনুযায়ী, ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা পেতে পারেন সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা। আর প্রথম থেকে দশম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ১০ বা ১৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা।

সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়ন করতে বছরে সরকারের খরচ হবে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর ১৫ শতাংশ দিলে সেই খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। বাজেট কাঠামো অনুযায়ী অর্থ বিভাগ এই মহার্ঘ ভাতা সংস্থানের প্রস্তুতিও নিয়েছে।

উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমানে দেশের প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন যারা মহার্ঘ ভাতা থেকে বঞ্চিত। এবার তারা নতুন করে আশার আলো দেখছেন। যদি ২০ মে’র বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়, তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মহার্ঘ ভাতা অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা প্রবল।

অর্থ উপদেষ্টা নিজেই আগামী বাজেট বক্তৃতায় মহার্ঘ ভাতা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়নের বিপরীতে ইনক্রিমেন্ট (বাৎসরিক ৫% বর্ধিত বেতন) বন্ধ করার প্রস্তাবও আলোচনায় রয়েছে।

সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, সরকার একটি স্থিতিশীল ব্যয় কাঠামোর মধ্যেই মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়ন করতে চায়। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক খসড়াও প্রস্তুত করেছে অর্থ বিভাগ। মূল বেতনের ওপর ভিত্তি করে মহার্ঘ ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিটি গ্রেডে ভিন্ন হারে ভাতার প্রস্তাব এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহার্ঘ ভাতা চালু হলে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এটি হবে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এতে একদিকে মূল্যস্ফীতির প্রভাব কিছুটা হ্রাস পাবে, অন্যদিকে কর্মীদের মনোবলও বাড়বে।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুযায়ী, অর্থ মন্ত্রণালয় আগামি সপ্তাহে চূড়ান্তভাবে মহার্ঘ ভাতা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। ২০ মে’র বৈঠকে প্রস্তাবিত খসড়া উপস্থাপন করা হবে, যার ভিত্তিতে সরকার আগামী বাজেটে মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা দিতে পারে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন