জান্নাতুন নাঈমা চৌধুরীর কলম থেকে..


ফিলিস্তিনের রক্ত: মুসলিম উম্মাহর চূড়ান্ত পরীক্ষা


ফিলিস্তিনের ভূমি আজও রক্তে ভিজছে। নিষ্পাপ শিশুদের কান্না, বিধ্বস্ত মায়েদের আহাজারি, আর শহীদের রক্তে ভেসে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের আকাশ। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ কি সত্যিই জেগে উঠেছে? নাকি আমরা এখনও নির্বিকার দর্শকের মতো কেবল দুঃখ প্রকাশ করেই আমাদের দায়িত্ব শেষ করছি?

আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে কি তিনি ইসরাঈলকে ধ্বংস করে দিতে পারতেন না? নিশ্চয়ই পারতেন! তবে পৃথিবীতে যা ঘটছে, তা শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সংঘাত নয়; বরং এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহা পরীক্ষা।

ফিলিস্তিন শুধু একটি ভূখণ্ডের নাম নয়, এটি মুসলিমদের ঈমানের অংশ এবং মুসলিম উম্মাহর একতার প্রতীক। আর ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণ কেবল একটি জাতির প্রতিনিধি নয়, তারা মুসলিম উম্মাহর পরীক্ষার প্রতীক। আজ ফিলিস্তিনের ভাই-বোনেরা শহীদ হয়ে জান্নাতের দরজা পেরিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা, যারা নিরাপদে বসে আছি, আমরা কীভাবে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হব?

আল-আকসা: মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের স্পন্দন

আল-আকসা শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের পবিত্র সম্পদ নয়, এটি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রথম কেবলা। ইসলামের ইতিহাসে এই মসজিদের গুরুত্ব অপরিসীম:

•প্রথম কেবলা: ইসলাম ধর্মের সূচনালগ্নে মুসলিমরা এই মসজিদের দিকেই নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে কেবলা পরিবর্তিত হয়ে কাবার দিকে নির্ধারিত হলেও, আল-আকসার গুরুত্ব বিন্দুমাত্র কমেনি।
•মিরাজের স্মৃতি: রাসূল (সা.) মিরাজের রাতে এই মসজিদ থেকে আসমানে গমন করেন। তাই এটি কেবল একটি মসজিদ নয়; বরং নবুওয়াতের অন্যতম পবিত্র নিদর্শন।
•ইসলামিক সভ্যতার অংশ: ইসলামের স্বর্ণযুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আল-আকসা মুসলিম ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ফিলিস্তিনের রক্ত কি আমাদের বিবেক জাগাবে?

ফিলিস্তিন আজ পৃথিবীর সবচেয়ে কঠোর খোলা কারাগার। ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিন রক্ত ঝরিয়ে আমাদেরকে জাগিয়ে তুলতে চাইছে, কিন্তু মুসলিম উম্মাহ কি সত্যিই জেগেছে? তাদের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে যখন শিশুরা শহীদ হচ্ছে, তখন কি আমাদের হৃদয় কাঁদে?

সেখানকার মানুষদের প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস করতে হয়। একদিকে দখলদারদের গুলি, অন্যদিকে খাবার-ঔষধের অভাব।

একটি মায়ের হৃদয়বিদারক শেষ মুহূর্তের দৃশ্য—সে তার সন্তানকে শেষবারের মতো আলিঙ্গন করছে, জানে, পরবর্তী বোমাটি হয়তো তাদের ঘরেই পড়বে। শিশুর হাতে থাকার কথা ছিল বই, অথচ সে ধরে আছে শহীদের কাফনের কাপড়।

এই ভয়াবহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ যদি চুপ থাকে, তবে আমরা কীভাবে নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করি?

এই অবিচারের বিরুদ্ধে যদি মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানরা নীরব থাকে, তবে সাধারণ জনগণ কি করবে? আমরা কি কেবল শোক প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হবো? নাকি ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেব?

মুসলিম উম্মাহর করণীয়

•ঐক্যবদ্ধ হওয়া: মুসলিম বিশ্বকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
•প্রচারণা চালানো: ফিলিস্তিনিদের উপর যে অন্যায় হচ্ছে, তা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে।
•অর্থনৈতিক প্রতিরোধ: যে দেশ বা সংস্থা ফিলিস্তিনের উপর নির্যাতনকে সমর্থন করে, তাদের পণ্য ও সেবা বর্জন করতে হবে।
•দোয়া ও সাহায্য: সর্বোপরি, তাদের জন্য দোয়া করা এবং মানবিক সাহায্য পাঠানো আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।

ফিলিস্তিনের মুক্তি শুধুমাত্র তাদের নয়, বরং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর নৈতিক বিজয় এবং একতা সুরক্ষিত হবে। এই পরীক্ষা থেকে আমাদের উত্তীর্ণ হতে হবে—হৃদয় দিয়ে, দোয়া দিয়ে, অর্থ দিয়ে এবং প্রয়োজনে আত্মত্যাগের মাধ্যমে।

আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই আসবে। কিন্তু আমাদের কি সেই সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন হয়েছে?

উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের নিজেকেই আগে প্রশ্ন করতে হবে।

অনুগ্রাহী ব্যক্তির অনুগ্রহে,
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি।
বিনিময়ে প্রাণ ভরে,
‘যাজাকাল্লাহু খাইরান’ বলি।

লেখক : জান্নাতুন নাঈমা চৌধুরী, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন