রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী টস, যেখানে নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাটিং করতে পাঠায় বাংলাদেশকে। শুরুটা ছিল আশায় ভরা, তানজিদ হাসান তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে ছিল সেই বিশ্বাস, যে বিশ্বাসে মনে হচ্ছিল, "আজকের দিনটা আমাদেরই হবে।" কিন্তু তানজিদ ফিরে যান ২৪ রান করে। শটগুলো ছিল রূপালি, কিন্তু ইনিংসটা ছিল অল্প। এরপর বাংলাদেশ একে একে হারাতে থাকে তার সঙ্গীদের—মেহেদী হাসান মিরাজ, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ—সবাই ফিরলেন এক অঙ্কের রানেই। মাঠে শূন্যতা, মনে এক চাপা অস্বস্তি।
তবে টাইগারদের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন দৃঢ়, ছিলেন স্থিতিশীল। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, "এই সময়টুকু আমার, আমার ব্যাটে দেশটা ফেরাতে হবে।" শান্ত খেলছিলেন ধীর গতিতে, কিন্তু একে একে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলেন। শান্তর ৭৭ রানের ইনিংসে ছিল ত্যাগ, ছিল লড়াই—তবে সেই লড়াই একা চলতে পারে না। সঙ্গী ছিল না, তাই দলের স্কোর থেমে যায় ২৩৬ রানে।
নিউজিল্যান্ডের বোলার মাইকেল ব্রেসওয়েল ছিলেন এক অনন্য বোলার, ৪ উইকেট নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। উইল ও’রউরকে, ম্যাট হেনরি—তাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশ হারাতে থাকে নিজের মোমেন্টাম।
এদিকে, বাংলাদেশ যখন আশা দেখতে শুরু করেছিল, তখন নিউজিল্যান্ডের ওপেনিং জুটিতে রাচিন রবীন্দ্র এবং ডেভন কনওয়ে তাদের ব্যাটিংয়ে ফিরিয়ে আনে শক্তি। তবে আশা এক মুহূর্তের জন্য ভেঙে পড়েছিল, যখন তাসকিন আহমেদ এবং নাহিদ রানা দ্রুত উইকেট তুলে নেয়। কনওয়ে ফিরে যান, তবে রাচিন রবীন্দ্রের ১১২ রানের সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ড ফিরে পায় ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি। টম ল্যাথামও ফিফটি হাঁকিয়ে এগিয়ে যান, আর রাচিনের পাশে হয়ে উঠেন এক অদম্য ফোর্স।
“ব্যাট থেকে সিঁড়ি হয়ে আমরা সেমিফাইনালে চলে যাবো”—এমন এক দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। রাচিন রবীন্দ্রের এক দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর তারা জয়ের দিকে ধাবিত হয়। ল্যাথামও ৫৫ রান করে ফিরে গেলেন। শেষে, মাইকেল ব্রেসওয়েল ও গ্লেন ফিলিপসের ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ড জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে, ২৩ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে।
আজকের পরিণতি ছিল বাংলাদেশের জন্য হৃদয়বিদারক। সেই শূন্যতা, সেই কষ্ট, সব কিছু মিলে এক গভীর দুঃখ হয়ে উঠল। ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা, সেই বিশাল স্বপ্ন যে আজ পূর্ণ হয়নি, তা আমাদের সবার মনেই রয়ে যাবে। তবে টাইগাররা হারেনি, তাদের লড়াইয়ের গল্প আমাদের মনে চিরকাল বেঁচে থাকবে। আগামীতে তাদের ফিরে আসার আস্থা, তাদের দুঃখের পরিসমাপ্তি এক নতুন দিনই বয়ে আনবে।