তোয়াকুলে ছালেহা ক্লিনিকে গর্ভবতী মায়ের রহস্যজনক মৃত্যু

অবৈধ ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যু, সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা


গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি 

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল বাজারে ‘ছালেহা ক্লিনিক’ নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এক গর্ভবতী মায়ের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। মৃত নারীর নাম সোনারা বেগম (২৫)। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণীখাই ইউনিয়নের দরাকুল গ্রামের নুরুজ্জামানের স্ত্রী এবং গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের বড়ঘোসা গ্রামের মৃত জহির আলীর মেয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে প্রসব বেদনা শুরু হলে সোনারা বেগমকে স্থানীয়দের পরামর্শে তোয়াকুল বাজারের ছালেহা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক না থাকায় তার স্বামী বারবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার অনুরোধ জানালেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তা অনুমতি দেয়নি। পরদিন সকাল ১১টার দিকে সোনারা বেগম ক্লিনিকেই মৃত্যুবরণ করেন।

ঘটনার খবর পেয়ে দুপুরে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহে যান গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও দৈনিক জৈন্তাবার্তার উপজেলা প্রতিনিধি সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশা, এবং প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ও দৈনিক উত্তরপূর্বের উপজেলা প্রতিনিধি হারুন আহমদ
তারা তথ্য সংগ্রহকালে ক্লিনিক পরিচালনাকারী সিন্ডিকেট সদস্য তোয়াকুল ইউনিয়নের লাকি গ্রামের আব্দুর রব শিকদারের ছেলে ফজলুর রহমান হৃদয় হঠাৎ তাদের ওপর হামলা চালায়। সাংবাদিকদের মারধর করে দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং তাদের একটি কক্ষে আটক রাখা হয়।

খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিক নেতারা গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম তালুকদারকে অবহিত করেন। বিষয়টি জানার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে দুটি টিম পাঠায়—একটি সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই শাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে এবং অপরটি গোয়াইনঘাট থানার এসআই তানজিলের নেতৃত্বে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা সাংবাদিকদের ছেড়ে পালিয়ে যায়।

মৃত সোনারা বেগমের স্বামী নুরুজ্জামান জানান, স্ত্রী প্রসব বেদনায় কষ্ট পেলেও ক্লিনিকের কেউ তাকে সঠিক চিকিৎসা দেয়নি। তিনি ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার অনুরোধ করলেও তা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে তিনি ময়নাতদন্তসহ আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে চাননি—‘সব কিছু আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছেন’ বলে জানান।

এ বিষয়ে সালুটিকর তদন্ত কেন্দ্রের এসআই শাহাব উদ্দিন বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মৃতের স্বামী তার স্ত্রীর মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছেন। তবে সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ রাখার ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে।”

গোয়াইনঘাট থানার ওসি তরিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “ছালেহা ক্লিনিকে এক গর্ভবতী নারীর মৃত্যু এবং সাংবাদিকদের ওপর অসদাচরণের বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠানো হয়েছে, এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তোয়াকুল বাজারে ছালেহা ক্লিনিকসহ আরও কয়েকটি অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক বহুদিন ধরে অবৈধভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসব ক্লিনিকে নেই প্রশিক্ষিত ডাক্তার বা অনুমোদিত স্বাস্থ্যকর্মী। হাতুড়ে টেকনিশিয়ানরা রোগীদের মনগড়া রিপোর্ট দিচ্ছেন, নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছেমতো ফি।

স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নেতার ছত্রছায়ায় এসব ক্লিনিক গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও এ ধরনের অবৈধ চিকিৎসা সেবার কারণে প্রসূতি নারী ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

সেবার নামে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য, অথচ কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো নজরদারি নেই—এমন অভিযোগ উঠছে স্থানীয়দের মধ্যে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন