জকিগঞ্জের ব্যবসায়ী নোমান হত্যা : ন্যায়বিচার নিয়ে পরিবারের শঙ্কা

উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবিতে স্বজনদের আবেদন সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে



নিজস্ব প্রতিবেদক

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নোমান উদ্দিন হত্যা মামলায় নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের পরিবার দাবি করেছে, সন্দেহভাজনদের স্বজনকে বাদী ও সাক্ষী বানিয়ে মামলা রেকর্ড করায় ন্যায়বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে নিহত নোমানের ভাই রিয়াজ উদ্দিন, চাচা বশির আহমদ চৌধুরী ও আত্মীয় আব্দুল মান্নানসহ পরিবারের সদস্যরা সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে লিখিত আবেদন দাখিল করেন। তাঁরা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, প্রায় তিন দশক প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে কালিগঞ্জ বাজার সংলগ্ন নতুন বাড়িতে স্ত্রী, দুই কন্যা ও শ্যালক হানিফ আহমদ সুমনসহ বসবাস শুরু করেন নোমান উদ্দিন। বাড়ির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর সঙ্গে শ্যালক সুমনের বিরোধ চলছিল।

পরিবারের দাবি, ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে হানিফ সুমন সহযোগী মাজেদ আহমদ ও তাছকিন আহমদ তাজুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে নোমানকে দোকান থেকে বাড়িতে ডেকে নেন। সেখানে অস্ত্রের মুখে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় তাঁকে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে বাথরুমে লাশ রেখে পরদিন ধানক্ষেতে ফেলে দেওয়া হয়।

এরপর শ্যালক সুমন নিজ ফেসবুক আইডিতে “নোমান নিখোঁজ” শিরোনামে পোস্ট দেন। সেই পোস্ট দেখে নোমানের ভাই ও স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে থানায় যোগাযোগ করলে পুলিশ জানায়—এর আগেই সুমন ও তাঁর সহযোগী সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করেন, “আমরা নিজেরা বাদী হয়ে মামলা করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি। পরে নোমানের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নিকে বাদী করে ‘অজ্ঞাত আসামি’ উল্লেখে মামলা রেকর্ড করা হয়। এতে সন্দেহভাজনদের অনেকেই বাদ পড়ে যান।”


পরিবারের আশঙ্কা, মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে প্রকৃত আসামিদের আড়াল করা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, শ্যালক হানিফ সুমনের কাছ থেকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় না হলে মামলাটি ভেস্তে যেতে পারে।

নোমানের ভাই রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত, তারাই এখন বাদী ও সাক্ষী। আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য প্রকাশ হলেই আমাদের শান্তি মিলবে।”

এদিকে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, “ঘটনার সব দিক যাচাই করে পুলিশ তদন্ত করছে। যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”


সম্পাদকীয় মন্তব্য 

সবুজ প্রান্ত মনে করে, জকিগঞ্জের এই হত্যা মামলা শুধু একটি পরিবারের নয়- ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আস্থারও প্রশ্ন জাগিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা ও তদন্তের স্বচ্ছতাই পারে সত্য উদঘাটন করে মৃত নোমানের পরিবারের দীর্ঘশ্বাস মুছে দিতে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন