গন্ডারগড়ে গ্রামীন রাস্তা নিয়ে বিরোধ : ইউএনও’র সাথে নেতৃবৃন্দের বৈঠক

সিলেটের জকিগঞ্জে কসকনকপুর ইউনিয়নের হাতিডহর থেকে গন্ডারগড় উত্তর–দক্ষিণ ভায়া বারঠাকুরী ইউনিয়নের ঠিলারগ্রাম সংযোগ রাস্তাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বী দুই পক্ষ। প্রায় বছরখানেক ধরে চলা এ বিরোধ এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যেকোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় প্রশাসন সরাসরি হস্তক্ষেপে এগিয়ে এসেছে।

আজ বুধবার (১ অক্টোবর ২০২৫) বিকাল ৩টায় উপজেলা পরিষদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমানের সাথে এ বিষয় নিয়ে নেতৃস্থানীয়দের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেন সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির আহবায়ক জাকির হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক দলের আহবায়ক ইকবাল আহমদ তাপাদার, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

বিরোধের সূত্র

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উত্তর গন্ডারগড় গ্রামের কালীমন্দিরসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাজারে যাতায়াতের একমাত্র পথ এই রাস্তা। বহুদিন ধরে দক্ষিণ গন্ডারগড় গ্রামের ভেতর দিয়ে পথটি ব্যবহার হয়ে আসছিল। তবে গতবছর থেকে মন্দিরকেন্দ্রিক সমস্যার কারণে দক্ষিণ গন্ডারগড়বাসী পৃথক হয়ে নতুন মন্দির নির্মাণ করেন। এরপর তারা দাবি করতে থাকেন, তাদের বাড়ির ভেতর দিয়ে অন্য গ্রামের মানুষ চলাচল করবে—এটি মেনে নেওয়া যাবে না।

অন্যদিকে উত্তর গন্ডারগড়ের মানুষ বলছেন, এটি পূর্ব পুরুষের আমল থেকে ব্যবহৃত একটি সরকারি রাস্তা। স্থানীয় ইউপি সদস্য তাজুল ইসলামও জানান, “এই রাস্তায় অতীতে একাধিক সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো নতুন রাস্তা নয়, বহু পুরনো পথ।”

দুই পক্ষের অবস্থান

এই বিরোধে দক্ষিণ গন্ডারগড় গ্রামের রাজেন্দ্র বিশ্বাস, রাজু বিশ্বাস ও মনজিত বিশ্বাস একপক্ষে রয়েছেন। অপরদিকে উত্তর গন্ডারগড়ের রুমন বিশ্বাস ও হীরা মোহন রায় অন্যপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দুই পক্ষই একে অপরের আত্মীয় হলেও বিরোধের কারণে দীর্ঘদিন ধরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ইউনিয়ন পরিষদের বক্তব্য

কসকনকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মঈন বলেন, “আমি দুই গ্রামের মানুষকে নিয়ে আপোষ-মীমাংসার চেষ্টা চালাচ্ছি। উত্তর গন্ডারগড়ের লোকজন ইতিমধ্যে জমানত জমা দিয়েছেন, তবে দক্ষিণ গন্ডারগড়ের পক্ষ থেকে এখনো দেওয়া হয়নি। রাস্তা হলে উভয় পক্ষই উপকৃত হবে। প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকেও আমরা সহযোগিতা করবো।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বক্তব্য

আজকের বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “এই রাস্তা নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা দ্রুত নিরসনে প্রশাসন উদ্যোগ নেবে। জনস্বার্থে উভয় পক্ষকে সমঝোতায় আসতে হবে।”

বৈঠকের মাধ্যমে স্থানীয়দের মধ্যে কিছুটা আশার আলো দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা আপাতত কমলেও মূল সমস্যার স্থায়ী সমাধান এখনো হয়নি।

স্থানীয়রা মনে করছেন, দ্রুত সমাধান না হলে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন