জকিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মর্নিং স্টার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চলমান অডিটকে ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে। শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, শিক্ষার্থীদের ফলাফল হেরফের, এফডিআর ও আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা, এমনকি অভিভাবকদের সাথে অসদাচরণের মতো অভিযোগে পুরো এলাকায় তীব্র আলোচনার ঝড় উঠেছে। এর প্রেক্ষিতে সভাপতি মাহমুদুল হাসান খোকন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
অডিটে অনিয়মের চিত্র
গত ৪ সেপ্টেম্বর গঠিত পাঁচ সদস্যের অডিট টিম তদন্ত শুরু করলে নানা অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসে। অভিযোগ রয়েছে, কিছু শিক্ষক নিজের সন্তানের মার্কস বাড়িয়ে দিয়েছেন, অন্য শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়েছেন, অর্থ লেনদেনে জবাবদিহি নেই, প্রশ্নপত্রে ভুল রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হচ্ছে।
সভাপতির পদত্যাগ ও নতুন নেতৃত্ব
বিতর্ক ঘনীভূত হলে সভাপতি ও গণিপুর কামালগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মাহমুদুল হাসান খোকন শারীরিক অসুস্থতা ও অডিটকেন্দ্রিক চাপের কারণে পদত্যাগ করেন। পরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক অভিভাবক সভায় অভিভাবক প্রতিনিধি আজিজুল খালিককে নতুন সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে নতুন সভাপতি আজিজুল খালিক অভিযোগ করেন, “অডিটে কিছু শিক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে সহযোগিতা করছেন না। ফলাফল হেরফের ও আর্থিক অনিয়ম স্পষ্ট। আমি চাই প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতিমুক্ত হোক।”
কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করেন, সন্তানদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গেলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ রটানো হয়, এমনকি অশালীন মন্তব্যও করা হয়।
পাল্টা বক্তব্য
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আছমা বেগম অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, “আমি মাত্র এক বছর আগে দায়িত্ব নিয়েছি। অডিটের নামে শিক্ষকদের মানসিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে।”
পদত্যাগী সভাপতি মাহমুদুল হাসান খোকন বলেন, “প্রতিষ্ঠানটির কোনো গঠনতন্ত্র নেই। অডিট নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্যগত কারণে আমি পদত্যাগ করেছি।”
প্রশাসনের অবস্থান
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “অভিযোগ-প্রতিবাদ দুটোই আমাদের জানা আছে। পূজার পর উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। আপাতত কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন। প্রতিষ্ঠান নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হবে।”
অভিভাবক মহলের প্রত্যাশা
এই ঘটনার পর স্কুল ও এলাকায় তীব্র আলোচনা চলছে। সচেতন অভিভাবক মহল বলছেন, “মর্নিং স্টার স্কুলের সুনাম ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা এখন জরুরি। এজন্য প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নেওয়া উচিত।”