সিলেটের প্রতি দীর্ঘদিনের বৈষম্য ও উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে শুরু হওয়া আব্দুল্লাহ আল মামুন সুজনের অনশন কর্মসূচি আংশিক সফলতার মধ্য দিয়ে আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার (১১ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক (ডিসি) এর আশ্বাসে তিনি এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন সুজন জানান, জেলা প্রশাসক আশ্বাস দিয়েছেন আগামী সাত দিনের মধ্যে ঢাকা-সিলেট রেলপথে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে, টিকিটের কালোবাজারি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বিমানের টিকিটের দামও সমন্বয় করা হবে। পাশাপাশি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে তদবিরের আশ্বাস দিয়েছেন ডিসি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ সিলেটের জন্য বিশেষ উন্নয়ন বাজেট অনুমোদনের প্রক্রিয়াতেও অগ্রগতি ঘটবে বলে জানান তিনি।
তবে সুজন বলেন, “সিলেটবাসী বারবার আশ্বাস পেয়েছে, কিন্তু আশাহত হয়েছে। তাই আন্দোলন থেমে থাকবে না। আমাদের দাবিগুলো দ্রুত পূরণ না হলে সিলেটবাসী দুর্বার আন্দোলনে নামবে, জেলায় জেলায় গণবিস্ফোরণ ঘটবে, হাজার হাজার মানুষ অনশনে বসবে ইনশাআল্লাহ।”
তিনি জানান, সিলেটবাসীর প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদে তার অনশনের মূল প্রেক্ষাপট হলো—
🔹 ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক: ২০২১ সালে কাজ শুরু হলেও পাঁচ বছরে অগ্রগতি মাত্র ১৫%।
🔹 ঢাকা-সিলেট রেললাইন: ব্রিটিশ আমলের পুরনো রেলপথে ডাবল লাইন প্রকল্পের উদ্যোগ ভেস্তে গেছে।
🔹 সিলেট বিমানবন্দর: ২০২২ সালে আধুনিকায়ন কাজ শুরু হলেও চার বছরে অগ্রগতি মাত্র ২২%, আন্তর্জাতিক রুটেও সীমিত ফ্লাইট।
🔹 দারিদ্র্যের হার: সিলেটে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার ৩৭.৭০% এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে ২৫.৫০% মানুষ বসবাস করছে।
🔹 প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়: ২০১৯ সালে পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি; বর্তমানে সাস্টের অধীনস্থ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭০টি পদের মধ্যে ৫০টি শূন্য, এমনকি অধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার পর্যন্ত নেই।
🔹 পর্যটন খাত: সিলেটকে ‘পর্যটন নগরী’ বলা হলেও কোনো সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা নেই।
🔹 রেমিট্যান্স অবদান: গত অর্থবছরে সিলেটের প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৬৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, তবুও সরকারের কোনো বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনা নেই।
৬০ ঘণ্টাব্যাপী অনশন কর্মসূচিতে পাশে থাকা ও সংহতি জানানো সকল নাগরিক, রাজনীতিক ও তরুণ সমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “সিলেটের উন্নয়ন এবং বৈষম্য নিরসনে আমরা এক ও অভিন্ন। জয় হোক সিলেটের—উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে যাক সিলেট বিভাগের প্রতিটি প্রান্তে।”
উল্লেখ্য, আব্দুল্লাহ আল মামুন সুজনের পৈত্রিক নিবাস সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে। বর্তমানে তিনি সিলেট শহরে বসবাস করছেন।
সবুজ প্রান্তের মন্তব্য:
সিলেটের উন্নয়ন-দাবিতে তরুণ প্রজন্মের এমন জাগরণ প্রমাণ করে—আঞ্চলিক বৈষম্য আর উপেক্ষার দিন শেষ হওয়া উচিত। এখন প্রয়োজন আশ্বাসের বাস্তবায়ন, যেন সিলেটবাসী প্রকৃত অর্থে দেশের উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে পারে।