গন্ডারগড়ে গ্রামীণ রাস্তা নিয়ে উত্তেজনা : দক্ষিণ গন্ডারগড়ের সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ:

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কসকনকপুর ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ গন্ডারগড় গ্রামের মধ্যে একটি গ্রামীণ রাস্তা নিয়ে চলমান বিরোধ আবারও নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে দক্ষিণ গন্ডারগড়ের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে নানা অভিযোগ তোলা হয়।

দক্ষিণ গন্ডারগড়ের রাজেন্দ্র বিশ্বাস সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, উত্তর গন্ডারগড়ের কয়েকটি পরিবার পূর্ব থেকে বিদ্যমান বিকল্প রাস্তা ব্যবহার না করে এখন তাদের বসতভিটার ভেতর দিয়ে জোর করে নতুন রাস্তা তৈরি করতে চাইছে। তিনি বলেন, “গত ২২ মার্চ প্রতিপক্ষ বেআইনিভাবে ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে আমাদের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। এক্সেভেটর দিয়ে গাছপালা উপড়ে ফেলে, বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি করে। এতে নারী-শিশুসহ ১২-১৪ জন গুরুতর আহত হন।”

রাজেন্দ্র বিশ্বাস আরও বলেন, “আমরা আইন ও প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সঠিক তদন্ত হলে এবং ন্যায়সঙ্গত সমাধান এলে আমরা তা মেনে নেব। তবে আমাদের পৈত্রিক ভিটায় জোর করে রাস্তা নির্মাণের কোনো প্রচেষ্টা বরদাশত করব না।”

তিনি জানান, এ ঘটনায় জকিগঞ্জ থানায় মামলা (নং-১৫) দায়ের করা হয়েছে, যা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। তার দাবি, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে এবং নারী সদস্যদের অপমানজনক আচরণের শিকার হতে হচ্ছে।

অন্যদিকে এর আগে গত ১ অক্টোবর (বুধবার) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এই রাস্তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ইকবাল আহমদ তাপাদার, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলুসহ এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

উত্তর গন্ডারগড়ের পক্ষের দাবি, পূর্বপুরুষের আমল থেকে গ্রামবাসী এই পথ দিয়ে যাতায়াত করছে। রাস্তাটি দিয়ে গর্দিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাসার মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকার শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন। তারা বলেন, “এটি কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি নয়—বরং বহু বছর ধরে জনসাধারণের ব্যবহৃত সরকারি রাস্তা।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম বলেন, “এই পথে একাধিকবার সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি একটি পুরনো গ্রামীণ রাস্তা, যা অতীতে দুই গ্রামের মানুষ ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতেন।”
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মঈন বলেন, “উভয় গ্রামের মানুষকে নিয়ে আমরা আপোষ-মীমাংসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। উত্তর গন্ডারগড়ের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে আমানত জমা দেওয়া হয়েছে, দক্ষিণ গন্ডারগড়ের পক্ষ থেকে এখনো বাকি। রাস্তাটি হলে উভয় গ্রামেরই উপকার হবে, প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও সহায়তা দেওয়া হবে।”

এদিকে ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ গ্রামবাসী প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান প্রত্যাশা করেছেন, যাতে পরিস্থিতি আর না ঘোলাটে হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতরপূর্বতন