বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়রের বক্তব্যে সিলেটের রাজনীতি আবারও সরগরম
সিলেটের রাজনীতি আবারও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য। তিনি বলেছেন,
“নির্বাচনে যদি আমাকে সংসদ সদস্য করেন, তাহলে সিলেট–১ দিতে হবে। আর যদি সংসদ সদস্য না দেন, তাহলে আমাকে মেয়রের প্রার্থী ঘোষণা করতে হবে। না হলে বলব— আপনাকে দিয়ে হবে না, আসসালামু আলাইকুম!”
এই বক্তব্যের পর থেকেই সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
তারেক না খালেদা— কার উদ্দেশে?
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নগরীর মেজরটিলা এলাকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা সংবলিত লিফলেট বিতরণ শেষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। দলীয় চেয়ারম্যান বলতে তিনি বেগম খালেদা জিয়া না তারেক রহমানকে বুঝিয়েছেন— তা স্পষ্ট না করলেও, সম্প্রতি লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে।
“ষড়যন্ত্র চলুক, নিয়ত সাফ রাখলে আল্লাহ সাহায্য করবেন”
বক্তব্যে আরিফুল বলেন,
“আমাকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র, অনেক চক্রান্ত চলে— চলুক। নিয়ত সাফ রাখলে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করবেন, ইনশাআল্লাহ। আমি এখনো স্থির করি নাই।”
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শুকুর আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মহানগর সহসভাপতি সাদিকুর রহমান ও কৃষক দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান প্রমুখ।
“একটা বিশেষ দল মাঠে কাজ করছে”
বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন,
“বিএনপি যাতে সরকার গঠন করতে না পারে, তার জন্য একটা বিশেষ দল, বিশেষ মহল নতুন ফর্মুলা দিয়া মাঠে কাজ করছে। আগে আওয়ামী লীগ বিএনপি-বিএনপি করত, এখন আবার নতুন দল আছে— নাম নেয় না, শুধু বলে ‘একটা বিশেষ দল’!”
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন,
“আমরার নাম মুখে আনবা না, নাইলে আমরাও হুঁশিয়ার। কেউ ফেরেশতা না, ধোয়া তুলসীপাতা না। জনগণ জানে কে কী করে।”
“রোগী রাস্তায় মারা যাইতাছে, ট্রেনেও টাডা পড়ে!”
সিলেট–ঢাকা সড়ক ও রেলপথের করুণ অবস্থার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন,
“সাইফুর রহমানের আমলে তিন ঘণ্টায় ঢাকা যাইতাম, এখন বারো ঘণ্টা লাগে। আজকে রোগী রাস্তায় মারা যাইতাছে। ট্রেনের অবস্থা সেইম— সারা দেশে নতুন বগি, নতুন ট্রেন, সিলেটে টাডা পড়ে!”
তিনি রেল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে বলেন,
“ঢাকা–সিলেট রুটে দুইটা স্পেশাল ট্রেন দে। রাস্তা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত জনগণ চুপ থাকব না।”
“বিমানের টিকিট ৩ হাজার থেকে ১২ হাজার!”
বিমান ভাড়ার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক এই মেয়র।
“রাস্তাঘাটের দুরবস্থা পাইয়া বিমানের টিকিট ৩ হাজার থেকে ১২ হাজার করছে। এমন মোরগা পাইছে আমরার সিলেটি হকলরে! এখনই ব্যবস্থা না নিলে বিমানের বিরুদ্ধেও জনগণ ব্যবস্থা নেবে।”
তিনি যোগ করেন, “আমরার রাস্তা ঠিক করতে হইব, বিমানের ভাড়াও কমাইতে হইব।”
বিশ্লেষণ: নতুন বার্তা, পুরনো সংকেত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আরিফুল হকের এই বক্তব্য শুধু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়— বরং সিলেটের রাজনীতিতে তাঁর ভবিষ্যৎ অবস্থান ও দলীয় কৌশলের অংশ। তাঁর “না দিলে আসসালামু আলাইকুম” উক্তি অনেকের কাছে একধরনের ‘All or Nothing’ বার্তা— যা বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি একটি স্পষ্ট সংকেত।
সিলেটের চায়ের দোকান থেকে রাজনৈতিক আড্ডা— সর্বত্র এখন একটাই প্রশ্ন, “আরিফুল কি এবার সংসদে, নাকি আবার মেয়র?”
সময়ই দেবে উত্তর, তবে তাঁর এই বক্তব্যে যে সিলেটের রাজনীতিতে নতুন ঢেউ উঠেছে— তা আর অস্বীকার করার উপায় নেই।
