চুল পড়া অনেকেরই সাধারণ সমস্যা, যা ধীরে ধীরে চুল পাতলা করে দেয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, পুষ্টির ঘাটতি, অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, মানসিক চাপ এবং কিছু স্বাস্থ্যজনিত কারণে চুল পড়তে পারে। তবে সঠিক খাবার, নিয়মিত যত্ন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার মাধ্যমে চুল পড়া অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এই প্রতিবেদনে চুল পড়া কমানোর কার্যকর উপায় ও চুলের যত্নের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস তুলে ধরা হয়েছে।
চুল পড়া রোধে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ খাবার
চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করতে পুষ্টিকর খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ১০টি খাবার আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন:
১. ডিম: ডিমে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যা চুলের প্রধান উপাদান। প্রোটিনের অভাবে চুল পড়া বাড়তে পারে। এছাড়াও, ডিমে থাকা বায়োটিন, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন বি১২ চুলকে ঘন ও সুন্দর রাখে।
২. বিভিন্ন ধরনের বাদাম: চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম এবং আখরোট—এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা চুলের গোড়াকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
৩. তৈলাক্ত মাছ: ইলিশ, কই, মলা এবং চাপিলার মতো তৈলাক্ত দেশীয় মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। এই উপাদানগুলো চুলকে ঘন ও কালো করতে সাহায্য করে এবং প্রোটিনেরও ভালো উৎস।
৪. পালং শাক: পালং শাকে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন এবং ফোলেট। এই উপাদানগুলো চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায় এবং চুলকে ঘন, কালো ও সুন্দর রাখে।
৫. হলুদ ও কমলা রঙের সবজি ও ফল: মিষ্টি আলু, গাজর, আম, পেঁপে এবং মিষ্টি কুমড়ার মতো ফল ও সবজি ভিটামিন এ-তে ভরপুর। ভিটামিন এ চুলের ফলিকলকে সুস্থ রাখে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৬. ডাল: ডালে রয়েছে প্রোটিন ও আয়রন। আয়রন মাথার তালুতে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে চুলের গোড়ায় অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে, যা চুল পড়া রোধে অত্যন্ত কার্যকর।
৭. বিভিন্ন ধরনের বীজ: চিয়া সিড, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বিচি এবং তিসির বীজে আছে আয়রন, জিঙ্ক ও প্রোটিন, যা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
৮. ছোলা: ছোলায় থাকা আয়রন, জিঙ্ক এবং প্রোটিন চুলকে সুস্থ ও সুন্দর রাখে।
৯. টক দই: প্রোটিন এবং জিঙ্কের একটি চমৎকার উৎস হলো টক দই, যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
১০. টক ফল: কমলা, মাল্টা, লেবু এবং কিউইয়ের মতো টকজাতীয় ফল ভিটামিন সি-তে পরিপূর্ণ। ভিটামিন সি কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে, যা চুলের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি শরীরকে খাবার থেকে আয়রন শোষণেও সহায়তা করে।
মনে রাখবেন, এই সব খাবার প্রতিদিন একসাথে খেতে হবে না। আপনার পছন্দ অনুযায়ী কিছু খাবার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলেই চুল পড়ার সমস্যা কমে আসবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
চুলের যত্নে করণীয়
খাবারের পাশাপাশি বাহ্যিক যত্নও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।
• শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
• ভেজা চুল জোরে ঘষবেন না, তোয়ালে দিয়ে হালকাভাবে চাপ দিয়ে শুকাতে হবে।
• ভেজা চুল আঁচড়াবেন না, চুল শুকালে চওড়া দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন।
• হেয়ার ড্রায়ার বা কার্লিং আয়রনের মতো বেশি তাপ ব্যবহার করবেন না।
• চুল খুব টাইট করে বাঁধবেন না, এতে চুল পড়তে পারে।
এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কদুর তেল ব্যবহার নতুন চুল গজাতে এবং চুল ঘন করতে সাহায্য করে।
সঠিক খাবার ও পরিচর্যার পরও যদি চুল পড়া বন্ধ না হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক চুল পড়ার মূল কারণ খুঁজে সঠিক সমাধান দিতে পারবেন।
